ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে শহিদ মিনারে না আসার আহ্বান
Scroll
ইঞ্জিন সংকটে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা, বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর
Scroll
ইউক্রেনে ন্যাটোর সেনাদের মেনে নেবে না রাশিয়া
Scroll
‘গঙ্গা পানি চুক্তি’ নবায়ন আলোচনায় মার্চে ভারত যাচ্ছে কারিগরি দল
Scroll
দিল্লিতে চলছে বিজিবি-বিএসএফের ৩ দিনের সম্মেলন
Scroll
কুয়েটে ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা
Scroll
দেশের বাজারে জুতার নতুন ব্র্যান্ড আনছে টি কে গ্রুপ
Scroll
এ অভ্যুত্থান সবার, সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে: মাহফুজ আলম
Scroll
অবশেষে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সম্মত রাশিয়া
Scroll
কুয়েটে হামলা: ঢাবিতে বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের আলাদাভাবে বিক্ষোভ
Scroll
নাইকো দুর্নীতি মামলার রায় আজ

ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছর করে কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩:৫৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৫৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছর করে কারাদণ্ড

২০১২ সালের ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। 

রফিকুল আমীন ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন-ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান লে. জে. (অব.) হারুন অর রশিদ, ডেসটিনির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. গোফরানুল হক, মো. সাঈদ উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী ও জামশেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।

রায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত আসামিদের ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আসামিদের এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড পরিশোধ না করলে জেলা প্রশাসনকে অর্থদণ্ড আদায় করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন—রফিকুল আমীন, ফারাহ দিবা ও মোহাম্মদ হোসেন। রায় শেষে তাঁদের সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে কারাগারে থাকায় তাদের সাজার মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জামিনে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ। তিনি আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে কারাগারে প্রথম শ্রেণির কয়েদির মর্যাদা দিতে কারা বিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত রায়ে বলেছেন, কারাগারে থাকা আসামিরা এর আগে যত দিন কারাগারে ছিলেন, সাজার মেয়াদ থেকে তত দিন বাদ যাবে।

বাকি ১৫ আসামি পলাতক। পলাতকদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বা আদালতে আত্মসমর্পণের পর এই রায় কার্যকর হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতারণামূলকভাবে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে তা অন্যত্র পাচার করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আইনে থাকা সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।’ গত বছর ১১ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।

গ্রাহকদের ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার কলাবাগান থানায় মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরকার। মামলার তদন্ত শেষে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার। তদন্তে আরও সাতজনের নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলায় বিচার চলাকালে ১৪০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) মামলায় আসামিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৮ লাখের বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে সরিয়ে নিয়েছেন।

অন্যদিকে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) জন্য ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে এই টাকার মধ্যে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি আসামিরা বেতন-ভাতা, সম্মানী, লভ্যাংশ, বিশেষ ভাতা বা কমিশনের আকারে আত্মসাৎ করেন।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ডেসটিনির সংঘ-স্মারকে (মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন) কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় জমি লিজ নিয়ে গাছ লাগানোর এবং গাছ বড় হলে তা বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন আসামিরা। পরস্পর যোগসাজশে তারা ডেসটিনির ব্যাংক হিসেবে টাকা রেখে ওই টাকা অন্যত্র স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন। ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার বেশি গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হলেও ডেসটিনির ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থিতি ছিল না। বিভিন্ন সময়ে আসামিরা ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার বেশি নিজেদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।

২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা আরেকটি মামলায় রফিকুল আমিনসহ ডেসটিনির অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত। রফিকুল আমিনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন