শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:০৩, ২১ জুন ২০২৫
ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি এবং মহাকাশ শাখার নেতা আমির আলি হাজিজাদেকে নিশানা করে হত্যা করেছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে চালানো হয়েছে নিখুঁত সাইবার হামলা, যেগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম। বিশ্লেষকদের মতে, এসব হামলার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে সরকারবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়া।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং কিছু মার্কিন কৌশলবিদ বহু বছর ধরেই মনে করে আসছেন—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে শাসনব্যবস্থারই পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ ইরানের গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালাতে ইসরায়েলের কাছে নেই প্রয়োজনীয় ‘সিবিইউ-৫৭’ ধরনের বোমা, যেটি শুধুমাত্র মার্কিন বি-২ বা বি-৫২ বোমারু বিমানের মাধ্যমেই ফেলা সম্ভব।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলি প্রচারণা বলছে—এই যুদ্ধ ‘ইরানি জনগণের নয়’, বরং শাসকগোষ্ঠীর। তারা আইআরজিসিকে জনগণের দমনকারী শক্তি হিসেবে তুলে ধরছে এবং আশা করছে—ভিতরের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এই প্রচারণায় সমর্থন দিয়েছেন দেশত্যাগী কিছু বিরোধী নেতা, যেমন রেজা পাহলভী এবং সাবেক তারকা ফুটবলার আলি করিমি।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, ইরানে সরকারবিরোধী মানুষেরাও এখন জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। আগে যারা সরকারের কড়া সমালোচক ছিলেন, তারাও এখন বলছেন—‘বিদেশি আগ্রাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’। কিংবদন্তি ফুটবলার আলি দায়ি স্পষ্ট বলেন, “আমি মরতে রাজি, কিন্তু দেশদ্রোহী হতে রাজি না।” সাবেক বিচারক মোহসেন বোরহানি টুইট করে জানান, তিনি ইরানের প্রতিরক্ষাবাহিনীর ‘হাত চুম্বন করতে চান’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল হয়তো ভুলভাবে ধরে নিয়েছিল যে, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাই ইরানের ভিত নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে এর বিপরীত ঘটেছে। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ১৯৫৩ সালের সিআইএ-সমর্থিত অভ্যুত্থান ও ইরান-ইরাক যুদ্ধের স্মৃতি এখন আবার সামনে এসেছে। এতে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের আত্মরক্ষার মনোভাব নিচ্ছে।
২০২২ সালের ‘মাশা আমিনি আন্দোলনে’র অনেক কর্মীও এখন বলছেন, সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও বিদেশি হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়। ফলে রাজনৈতিক সংস্কারের আলোচনার জায়গায় এখন উঠে এসেছে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রশ্ন।
অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইসলামি, যিনি বর্তমানে পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব মিনহোতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে কর্মরত, বিশ্লেষণ করে বলেছেন—ইসরায়েলের আক্রমণ ব্যুমেরাং হয়ে ফিরেছে। বোমা পড়ছে, জেনারেল নিহত হচ্ছেন, কিন্তু ইরান ধসে পড়ছে না। বরং সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে। সরকারের প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে।
ইসরায়েল চেয়েছিল ইরানের ভিত নাড়িয়ে দিতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—ইরান এখন আরও ঐক্যবদ্ধ। এই হামলা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, রাজনীতির ময়দানে ইসরায়েলের কৌশলগত ব্যর্থতা হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ