ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
দুই সপ্তাহের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু
Scroll
তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
Scroll
দেশে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় আঠারো বছরের আগে: ইউএনএফপিএর প্রতিবেদন
Scroll
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা
Scroll
লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধে সাড়া দেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
Scroll
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কিছু সম্পদ জব্দ করেছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-এনসিএ
Scroll
সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৭০ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ
Scroll
ভারতের রাজধানীতে দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট জারি, হিট ইনডেক্সে তাপমাত্রা ৫১ দশমিক নয় ডিগ্রি

সন্তান নিতে চাইলেও পারছেন না কোটি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮:০৩, ১০ জুন ২০২৫

সন্তান নিতে চাইলেও পারছেন না কোটি মানুষ

পৃথিবীতে সন্তান জন্মের হার যে হারে কমছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই বাস্তবতা উঠে এসেছে গভীর উদ্বেগের সুরে। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে শত শত কোটি মানুষ আজ পরিবার গড়ার স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবতা তাদের সেই স্বপ্নকে পৌঁছে দিচ্ছে না গন্তব্যে।

সন্তান না নিতে চাওয়ার ইচ্ছা নয়—বরং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব ও সময়ের ঘাটতি মানুষকে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত রাখছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।

ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া ক্যানেম বলেন, “বিশ্ব একটি নজিরবিহীন জন্মহার হ্রাসের দিকে এগোচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ অন্তত দুটি সন্তান চান, কিন্তু তারা মনে করেন, চাইলেও সেই পরিবার তৈরি করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সেটাই এখন সবচেয়ে বড় সংকট।”

১৪টি দেশে চালানো এই জরিপে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। যেসব দেশের মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, তা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশগুলো হলো: দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া।

-৩৯% উত্তরদাতা বলেছেন, অর্থনৈতিক বাধা তাঁদের সন্তান নিতে দিচ্ছে না।

-১২% জানিয়েছেন, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তান ধারণে জটিলতা বড় বাধা।

-৩১% অংশগ্রহণকারী (বয়স ৫০-এর বেশি) জানিয়েছেন, তাঁরা চেয়েছিলেন আরও সন্তান, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

বিশেষত দক্ষিণ কোরিয়ায় অর্থনৈতিক কারণটি তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে—দেশটির ৫৮% মানুষ বলেছে, তারা সন্তান নিতে পারছেন না খরচের কারণে।

UNFPA আরও বলছে, সন্তান না নিতে পারার পেছনে ‘সময় না থাকা’ বিষয়টি এখন অর্থনৈতিক সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কর্মব্যস্ত জীবন, চাকরির চাপ ও সামাজিক কাঠামোর অভাবে মানুষ পরিবার গঠনের সময়ই পাচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ যে দেশে অতিরিক্ত জন্মহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল, এখন সেই সংস্থাই উদ্বিগ্ন উল্টো কারণে—নিম্ন জন্মহার ও প্রজনন সংকট।

হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, “জাতিসংঘ এত দিন মনোযোগ দিত যেখানে নারীরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সন্তান নিতেন। এবারই প্রথম তারা এত জোর দিয়ে বলছে—মানুষ সন্তান নিতে চাইলেও পারছে না, এটিও জরুরি সংকট।”

নিম্ন জন্মহার এখন অনেক দেশে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠছে। অধ্যাপক গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, “জাতীয়তাবাদী, অভিবাসনবিরোধী বা রক্ষণশীল লিঙ্গনীতি বাস্তবায়নে অনেক দেশ এই সংকটকে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রয়োজন বিচক্ষণতা, আতঙ্ক নয়।”

ড. নাটালিয়া ক্যানেম স্মরণ করিয়ে দেন, চীন, কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ একসময় অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। অথচ আজ তারা চায় প্রজনন হার বাড়াতে। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ কিংবা উদ্বেগ নয়, বরং পরিবার গঠনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।

আজকের পৃথিবীতে পরিবার গঠন যেন হয়ে উঠছে একটি লাক্সারি। মানুষ সন্তান নিতে চায়, ভালোবাসতে চায়, ভবিষ্যৎ গড়তে চায়—কিন্তু খরচ, সময়, সহায়তা আর সঙ্গীর অভাবে সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবের মাটিতে দাড়াতে পারছে না। UNFPA-এর প্রতিবেদন তাই শুধু জনসংখ্যার পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির আয়নাও।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন