শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:০৩, ১০ জুন ২০২৫
সন্তান না নিতে চাওয়ার ইচ্ছা নয়—বরং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব ও সময়ের ঘাটতি মানুষকে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত রাখছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।
ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া ক্যানেম বলেন, “বিশ্ব একটি নজিরবিহীন জন্মহার হ্রাসের দিকে এগোচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ অন্তত দুটি সন্তান চান, কিন্তু তারা মনে করেন, চাইলেও সেই পরিবার তৈরি করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সেটাই এখন সবচেয়ে বড় সংকট।”
১৪টি দেশে চালানো এই জরিপে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। যেসব দেশের মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, তা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশগুলো হলো: দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া।
-৩৯% উত্তরদাতা বলেছেন, অর্থনৈতিক বাধা তাঁদের সন্তান নিতে দিচ্ছে না।
-১২% জানিয়েছেন, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তান ধারণে জটিলতা বড় বাধা।
-৩১% অংশগ্রহণকারী (বয়স ৫০-এর বেশি) জানিয়েছেন, তাঁরা চেয়েছিলেন আরও সন্তান, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
বিশেষত দক্ষিণ কোরিয়ায় অর্থনৈতিক কারণটি তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে—দেশটির ৫৮% মানুষ বলেছে, তারা সন্তান নিতে পারছেন না খরচের কারণে।
UNFPA আরও বলছে, সন্তান না নিতে পারার পেছনে ‘সময় না থাকা’ বিষয়টি এখন অর্থনৈতিক সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কর্মব্যস্ত জীবন, চাকরির চাপ ও সামাজিক কাঠামোর অভাবে মানুষ পরিবার গঠনের সময়ই পাচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ যে দেশে অতিরিক্ত জন্মহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল, এখন সেই সংস্থাই উদ্বিগ্ন উল্টো কারণে—নিম্ন জন্মহার ও প্রজনন সংকট।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, “জাতিসংঘ এত দিন মনোযোগ দিত যেখানে নারীরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সন্তান নিতেন। এবারই প্রথম তারা এত জোর দিয়ে বলছে—মানুষ সন্তান নিতে চাইলেও পারছে না, এটিও জরুরি সংকট।”
নিম্ন জন্মহার এখন অনেক দেশে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠছে। অধ্যাপক গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, “জাতীয়তাবাদী, অভিবাসনবিরোধী বা রক্ষণশীল লিঙ্গনীতি বাস্তবায়নে অনেক দেশ এই সংকটকে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রয়োজন বিচক্ষণতা, আতঙ্ক নয়।”
ড. নাটালিয়া ক্যানেম স্মরণ করিয়ে দেন, চীন, কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ একসময় অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। অথচ আজ তারা চায় প্রজনন হার বাড়াতে। নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ কিংবা উদ্বেগ নয়, বরং পরিবার গঠনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
আজকের পৃথিবীতে পরিবার গঠন যেন হয়ে উঠছে একটি লাক্সারি। মানুষ সন্তান নিতে চায়, ভালোবাসতে চায়, ভবিষ্যৎ গড়তে চায়—কিন্তু খরচ, সময়, সহায়তা আর সঙ্গীর অভাবে সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবের মাটিতে দাড়াতে পারছে না। UNFPA-এর প্রতিবেদন তাই শুধু জনসংখ্যার পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির আয়নাও।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ