ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

সাংগ্রাইয়ের জলোৎসবে সাঙ্গ রাঙামাটিতে বৈসাবি উৎসব

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

সাংগ্রাইয়ের জলোৎসবে সাঙ্গ রাঙামাটিতে বৈসাবি উৎসব

সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কমতেই রাঙামাটি চিং হ্লা মারী স্টেডিয়ামে ভিড় করেছেন মারমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। অবশ্যই এখানে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। সামনে পাত্রভর্তি পানির সামনে দুই লাইনে দাঁড়িয়ে তরুণ-তরুণীরা মুখোমুখি হয়ে একে অপরের গায়ে অবিরাম বর্ষণ করছেন। সুরের তালে তালে চলে দলীয় পর্যায়ে পানি ছিটানো। এই খেলায় যেমন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে সবাই, তেমনি তরুণ-তরুণীদের কাছে এটি হয়ে উঠে একে অপরের প্রতি অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। সাংগ্রাই জলোৎসবে পুরোনো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে ভুলে গিয়ে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিচ্ছেন তারা।

পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করতে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই উৎসব পালন করে আসছে। এবছরও জেলার বিভিন্ন স্থানে সাংগ্রাই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে রাঙামাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা(মাসস) এর উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংগ্রাই জলোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই বছরের বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা। 

সকালে অতিথিরা ঘণ্টা বাজিয়ে জলকেলির উদ্বোধন করেন। এরপর সকলে একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে সকল অবসাদ দূর করে দেয়। এসময় মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহি গান ও নাচ পরিবেশন করা হয়। গানে গানে এসময় মারমা তরুণ-তরুণীরা নেচে গেয়ে উৎসবটি পালন করে। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আগত কয়েক হাজার মারমা নারী-পুরুষ একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করতে থাকে।

কাউখালী থেকে জলোৎসবে যোগ দেয়া আনুমং মারমা বলেন, জলকেলির মাধ্যমে আমরা পুরোনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি দূর করে নতুন বছরকে বরণ করি। কাপ্তাই থেকে আসা অ্যানি মারমা বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। সকল জনগোষ্ঠীর মানুষ এই উৎসবে অংশ নেয়। 

‘নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার প্রয়াস’ এই শ্লোগানে জলোৎসবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি থোয়াই সুই খই মারমা’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড এস এম ফরহাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও নেদারল্যান্ডস, ইতালির রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কেউই আর এখন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়। সবাই সমান তালে চলবে। পাহাড়ের বাসিন্দা বলে আপনারা নিজেদের সমতলের চেয়ে পিছিয়ে পড়া মনে করবেন না। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে কোয়ালিটি এডুকেশনকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন হবে। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পাহাড়ে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে।’ 

আরও পড়ুন