শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৭, ২১ জুন ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৫৭, ২১ জুন ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
সরকারের অর্থায়নে চালু হতে যাওয়া প্রকল্পটি ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে, যেখানে রয়েছে ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই উপজেলাগুলোর মধ্যে ৯১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩৫টি উপজেলা অতি উচ্চ বা উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে শিক্ষা ও পুষ্টি উভয়ই সংকটে রয়েছে। বাকি ১৪টি উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের ভিত্তিতে এই দারিদ্র্য শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত হবে।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত অপর প্রকল্পটি কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ১৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৫৬৯টি এবং বান্দরবানে ৪৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত, সর্বমোট এক হাজার ৯৫টি বিদ্যালয়। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী। এ প্রকল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত মিয়ানমারের উদ্বাস্তু শিশুদেরও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে, যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
স্কুল ফিডিং কর্মসূচি আগামী জুলাই মাস থেকে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও কোনো কারণবশত নির্ধারিত সময়ে শুরু করা না গেলে, আগস্ট থেকে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। ইতোমধ্যে উভয় প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে, যারা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
খাবারের সুনির্দিষ্ট তালিকাও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা খাদ্য পাবে। রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের একটি করে ডিম এবং ১২০ গ্রাম ওজনের বান দেওয়া হবে। সোমবার থাকবে ২০০ মিলিলিটার ইউএইচটি দুধ এবং একটি বান। বুধবার দেওয়া হবে ৭৫ গ্রাম ওজনের একটি বিস্কুট ও ১০০ গ্রাম সাইজের একটি কলা অথবা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাওয়া মৌসুমি ফল। প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকায় মোট এনার্জির ২৫ দশমিক নয় শতাংশ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ৩২ দশমিক দুই শতাংশ, প্রোটিনের ১৬ দশমিক চার শতাংশ এবং ফ্যাটের ২১ দশমিক সাত শতাংশ সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, অপুষ্টিজনিত সমস্যা হ্রাস এবং শিক্ষায় মনোযোগ ধরে রাখা। একইসাথে এটি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে ডিম, বান ও কলার মতো খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো আমাদের শিশুদের প্র্যাকটিক্যাল প্রয়োজন। অনেক পরিবার আর্থিক অক্ষমতার কারণে এসব প্রয়োজনীয় খাদ্য তাদের সন্তানদের দিতে পারে না। তাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, শিশুদের দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে ধরে রাখা, দুপুরে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করা এবং অপুষ্টির প্রতিকার করা। কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথম স্কুল ফিডিং কর্মসূচির সূচনা হয়। তা ২০১০ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। এরপর ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় আরো একটি পৃথক স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু ছিল, যার আওতায় শিক্ষার্থীদের শুধু উচ্চমানসম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হতো। নতুন প্রকল্পটি আগের চেয়ে আরও উন্নত ও পুষ্টিনির্ভর এবং এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ