শিরোনাম
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:০৭, ৫ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টায় ড. ইউনূস এই ঘোষণা দেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
ঘোষণাপত্র পাঠের সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা ছিল একটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন। কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী অপপ্রয়োগ সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মূল প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়। কিন্তু ১/১১-এর ষড়যন্ত্র এবং বিদেশি শক্তির প্রভাবে ফের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী, একচ্ছত্র ও দমনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
ড. ইউনূস ঘোষণাপত্রে বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, বিরোধী দলের দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির বিস্তার দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
তিনি উল্লেখ করেন, তথাকথিত উন্নয়নের নামে সীমাহীন লুটপাট ও পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড, প্রহসনের তিনটি জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হামলা—এসবের প্রতিবাদে দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বিশেষ করে চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময় ভয়াবহ দমন-পীড়ন জনগণের ক্ষোভকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এর চূড়ান্ত পর্যায়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে গণভবন অভিমুখে জনতার যাত্রার মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
এ সময় জনগণের দাবির মুখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।
তারা দাবি করেছে, বিগত সরকারের গুম-খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, রাষ্ট্রীয় লুণ্ঠনের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সুরক্ষা এবং নতুন নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশ-সহিষ্ণু, টেকসই উন্নয়ন কৌশল নিশ্চিত করতে হবে যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত থাকে। এবং সর্বোপরি, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪–এর যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করে, ঘোষণাপত্রটি আগামী নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণীত হয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে