শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৩৫, ৫ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ২১:৩০, ৫ আগস্ট ২০২৫
যুদ্ধাপরাধীদের ছবি
জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান, শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি। মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযমের ছবি প্রদর্শনীতে অনুপস্থিত ছিল।
২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তবে সাঈদী কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান, আর গোলাম আযম ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় ২০১৪ সালে মারা যান।
আয়োজক ছাত্রশিবির বলছে, এই নেতারা ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ডের’ শিকার। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপে পরিচালিত।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নউরিন সুলতানা তমা বলেন, ‘৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবসে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি টাঙিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার বার্তা বাস্তবায়নে এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছে।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সর্ব মিত্র বলেন, ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করে যারা একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে, তারা ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা করছে। আমরা তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি। গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ‘রাজাকার’ বলায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এখন ছাত্রশিবির যদি ভাবে, তারা সেই রাজাকারের ছবিই গ্লোরিফাই করবে, তাহলে তাদের ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই জুটবে না।’
তবে এসব অভিযোগের জবাবে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘একাত্তর আমাদের গৌরবের অধ্যায়। কিন্তু শেখ হাসিনার আমলে বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্কাইপি কেলেঙ্কারিতে সাক্ষী ও আইনজীবী গুম হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবে রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা একতরফা নয়, সবকিছুই সামনে আনছি। আমাদের বক্তব্য হলো, এই বিচার ব্যবস্থা যদি সুষ্ঠু হতো, আমরা মেনে নিতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসনামলে যা হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে আরো থাকছে জুলাই বিপ্লব নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, শহীদদের নিয়ে গান ও কবিতা, নাটক ও মাইম, ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘ফতেহ গণভবন’ নামের প্রতীকী স্থাপনা, প্লানচেট বিতর্ক ও আলোচনা সভা। প্রদর্শনীতে আরো প্রদর্শিত হচ্ছে গণভবন দখলের চিত্র, নারী বিপ্লবীদের চিত্র, শহীদ আবু সাইদসহ অন্যান্য আন্দোলনকারীদের ছবি ও জুলাই বিপ্লবের বিভিন্ন মুহূর্ত।
তবে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের এভাবে প্রদর্শন করাকে অনেকেই দেখছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা হিসেবে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাত্তরের চিহ্নিত রাজাকারদের গৌরবান্বিত করার এই প্রচেষ্টা ঐতিহাসিক সত্যকে ধোঁয়াশায় ফেলতে পারে এবং নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে