শিরোনাম
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯:৩৪, ৫ আগস্ট ২০২৫
ছবি: দেবীদ্বারের শহীদেরা
প্রথম রক্ত ঝরে ৪ আগস্ট। বানিয়াপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হন দেবীদ্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বাদশা রুবেল (৪৩)। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও থেমে থাকেনি নির্মমতা তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন পেশায় বাসচালক, বারেরা গ্রামের বাসিন্দা, প্রয়াত রফিকুল ইসলামের সন্তান। মৃত্যুকালে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হ্যাপি আক্তার ছিলেন নয় মাসের গর্ভধারিণী। রুবেলের রেখে যাওয়া এক মেয়ে এবং পরে জন্ম নেওয়া এক ছেলে এখন শোকবিহ্বল পরিবারে যুদ্ধ করে টিকে আছে।
পরদিন ৫ আগস্ট থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম সাব্বির (১৮)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাব্বির সংসার চালাতেন ভ্যান চালিয়ে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ৪০ দিন পর, ১৪ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তিনি ভিংলাবাড়ি গ্রামের প্রয়াত আলমগীর হোসেনের সন্তান। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন সিএনজি চালক আব্দুস সামাদ, যিনি দীর্ঘ সাত মাস মৃত্যুর সাথে লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২০২৫ সালের ৪ মার্চ, ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।
তালিকায় আছেন স্কুলছাত্র আবুবকরও, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। পরিবারের আহ্বান, তার উন্নত চিকিৎসায় সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রয়োজন।
দেবীদ্বারের নয় জন তরুণ ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী, দিনমজুর, কিংবা নিম্নআয়ের পেশাজীবী।
ফয়সাল সরকার (২৪), এলাহাবাদের কাচিসাইর গ্রামের। ঢাকা পলিটেকনিকে পড়তেন। ১৯ জুলাই আব্দুল্লাহপুরে পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যায়। অজ্ঞাত পরিচয়ে ঢাকায় দাফন করা হয় তাকে।
সাগর মিয়া (১৯), বড়শালঘর গ্রামের সবজি বিক্রেতা, ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। হোসাইন মিয়া (১০), বেতুয়া গ্রামের পপকর্ন বিক্রেতা, ২০ জুলাই চিটাগং রোডে তলপেটে গুলিতে শহীদ। কাদির হোসেন সোহাগ (২২), সূর্যপুর গ্রামের পাঠাও কর্মী, ২০ জুলাই গোপীবাগে পুলিশের গুলিতে নিহত। জহিরুল ইসলাম রাসেল, মহেশপুর গ্রামের ছাত্র, ৪ আগস্ট গুলিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। রবিন মিয়া (৩৫), ওয়াহেদপুরের ব্যবসায়ী, ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে শহীদ হন। রায়হান রাব্বি, খয়রাবাদের শিক্ষার্থী, ৫ আগস্ট খিলগাঁও তালতলায় গুলিতে শহীদ হন। সাইফুল ইসলাম তন্ময়, এলাহাবাদ গ্রামের যুবক, (তার মৃত্যু সংক্রান্ত বিস্তারিত পাওয়া যায়নি)। নাজমুল হাসান, রসুলপুরের চাকরিজীবী, ঢাকার মধ্য বাড্ডায় ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২০ জুলাই তাকে মাদারীপুরে দাফন করা হয়।
দেবীদ্বারে এই রক্তাক্ত ইতিহাস এখন শুধুই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয় এটা একেকটি পরিবারের বেদনার আলেখ্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের ত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়; প্রতিবাদের মূল্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। একদিকে পুলিশি দমন, অন্যদিকে শাসক দলের অস্ত্রধারীদের সন্ত্রাসে থেমে গেছে বহু তরুণের ভবিষ্যৎ।
এই ১২ শহীদ শুধুই দেবীদ্বারের নয় তারা এই দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার প্রতীক। তাদের রক্তে লেখা হয়েছে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বিচার, যেন তাদের আত্মত্যাগ বৃথা না যায়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে