শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৬, ২৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
এ ছাড়া, ২০২৪ সালের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিঠাপানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এই তথ্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ প্রতিবেদনে উঠে আসে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন, বিশেষত মাছ উৎপাদনে দেশের অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতির প্রতীক।
বাংলাদেশের মাছ উৎপাদনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার (২৩ জুলাই) থেকে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ পালিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য- ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’।
গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে, ৪৭ লাখ হেক্টর জলাশয়ে মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টন মাছ ছিল চাষের, ১৪ লাখ ১১ হাজার টন মাছ আহৃত হয় উন্মুক্ত জলাশয় থেকে, আর বাকিটা সংগ্রহ করা হয় সমুদ্র থেকে। বাংলাদেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের ২৬১ প্রজাতি রয়েছে এবং উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত মাছের অর্ধেকই ইলিশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন করেছে; যা ইলিশ উৎপাদনে দেশের বিশ্বব্যাপী সুনাম আরো বৃদ্ধি করেছে।
দেশের মোট মাছ উৎপাদনে ৫৬ শতাংশ মাছ পুকুর থেকে আসে। গত তিন দশকে, পুকুরে মাছ চাষের মাধ্যমে উৎপাদন প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে। পুকুর ছাড়া, বিল এবং নদীতেও পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ হচ্ছে; যা উৎপাদনে সহায়তা করছে।
গত এক যুগে বাংলাদেশের মাছ উৎপাদন এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন; যা বর্তমানে ৫০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদন গত চার দশকে প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে, মাছের উৎপাদন ছিল মাত্র সাত লাখ ৫৪ হাজার টন।
মাছ উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও সহায়ক হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু দৈনিক ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রাম মাছ খাচ্ছে; যা আগে ছিল ৬০ গ্রাম। মৎস্য খাতের অবদান বাংলাদেশের মোট জিডিপির দুই দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এ ছাড়া, মৎস্য খাতের প্রায় দুই কোটি মানুষ; যাদের মধ্যে ১৪ লাখ নারী, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এই খাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ৭৭ হাজার টন মাছ ও মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। মাছের রপ্তানি থেকে জাতীয় রপ্তানি আয়ের শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ এসেছে।
বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাছ উৎপাদন আরো ৩০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি মৎস্য খামার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য সরকারের রাজস্ব খাত থেকে প্রায় ৩৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা ২০২৮ সাল পর্যন্ত চলবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রায় এক দশক ধরে দেশে মাছ চাষের একটি বিপ্লব চলছে, যেখানে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। দেশীয় মাছের জাত সংরক্ষণ, মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা মানা এবং সরকারের মৎস্যবান্ধব নীতিমালার কারণে উৎপাদন বেড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল ওহাব বলেন, এখন দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট এবং মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তাহলে দেশে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব হবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ