ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ মুহররম ১৪৪৭

স্ত্রীর মাথা থেঁতলে হত্যায় স্কুল শিক্ষক আমিরুলের মৃত্যুদণ্ড

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১:৪৮, ২৩ জুলাই ২০২৫

স্ত্রীর মাথা থেঁতলে হত্যায় স্কুল শিক্ষক আমিরুলের মৃত্যুদণ্ড

ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে শিলপাটা দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার দায়ে আমিরুল ইসলাম বাবু (৩৫) নামের এক স্কুল শিক্ষককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো. আবু শামীম আজাদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় আসামি আমিরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. কাইউম খান।

দণ্ডপ্রাপ্ত আমিরুল ইসলাম বাবু সোনারগাঁ উপজেলার বারদী এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দর গার্লস স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আমিরুল ইসলামের সঙ্গে সোনারগাঁয়ের বারদী এলাকার মো. করিম মোল্লার মেয়ে শান্তা আক্তারের বিয়ে হয়। কিছুদিন পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে ২০১৯ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর শান্তা অন্যত্র বিয়ে করেন।

তবে বিচ্ছেদের সাত মাস পর শান্তাকে আবারও বিয়ে করেন আমিরুল। দ্বিতীয় বিয়ের পর তারা বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু করেন। কিন্তু দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবনও কলহমুক্ত ছিল না। বিয়ের দুই মাস না যেতেই ফের শুরু হয় অশান্তি। এরই একপর্যায়ে ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে।

২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর পারিবারিক কলহের জেরে আমিরুল ইসলাম স্ত্রী শান্তাকে বেধড়ক মারধর করেন এবং ঘরের শিলপাটা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। হত্যার পর মৃতদেহ বিকৃত করার উদ্দেশ্যে বঁটি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া ছিলে তাতে লবণ মাখিয়ে দেন তিনি। পরে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় নিহত শান্তার বাবা করিম মোল্লা বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয় এবং আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, ‘আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, পারিবারিক কলহের কারণেই স্ত্রীকে তিনি শিলপাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন এবং পরে লাশ বিকৃত করেন। বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ ১১ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে আদালত আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন ‘

তিনি আরো বলেন, ‘এই রায় নারায়ণগঞ্জের মানুষকে একটি বার্তা দেবে- পারিবারিক সহিংসতা ও নারীর প্রতি বর্বরতা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। আইন রয়েছে, বিচার হয় এবং অপরাধীর শাস্তি হয়।’

এ রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ চার বছরের বিচারপ্রক্রিয়ার অবসান ঘটল। নিহত শান্তার পরিবার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা চূড়ান্ত বিচার কার্যকর দেখতে চান।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন