শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১:৫৮, ২৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা হলেন- সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. মহসিন আলী সরদার এবং সার্ভেয়ার নজরুল ইসলাম সরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির কাগজপত্র বৈধ থাকার পরও জরিপকর্মীরা “জমিতে সমস্যা আছে”, “ফাইল আটকে যাবে”, “ম্যাপ জটিলতা হবে”—এমন নানা অজুহাতে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়েছে।
ঘটনার সময় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে অভিযোগকারীদের ঘটনাস্থলে ডেকে আনা হয়। একে একে উপস্থিত হয়ে অনেকে তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আমেনা বেগম নামের এক নারী বলেন, “আমি কিডনি রোগী। আমার ছেলেকে কাগজপত্র দিয়ে পাঠাইলে কর্মকর্তারা বলে জমিতে সমস্যা আছে, কাজ করতে হলে টাকা লাগবে। পরে হারুন নামে একজন আমাদের বাসায় এসে ১০ হাজার টাকা নেয়।”
স্থানীয় ছাত্রনেতা আরাফাত হোসেন জানান, “আমার মামা এনায়েত হোসেনের কাছ থেকে ১৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বহুদিন ধরে এই ধরনের অভিযোগ আসছিল। আজ এলাকাবাসী মিলে তাদের অবরুদ্ধ করেছি।”
জরিপ কার্যক্রমে থাকা একাধিক ভূমি মালিক অভিযোগ করেন, তারা সরাসরি কিংবা দালালের মাধ্যমে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। না দিলে জরিপ কার্যক্রম ‘অসুবিধাজনক’ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ডিজিটাল ভূমি জরিপের ঢাকা জোনের প্রধান মাহমুদ জামান বলেন,
“অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত দল পাঠানো হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “ডিজিটাল জরিপের উদ্দেশ্যই হচ্ছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
অবরুদ্ধ দুই কর্মকর্তা অভিযুক্ত হলেও তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের জরিপ কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর হীরাঝিল এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত ঘুষ আদায় করে আসছিলেন। কেউ মুখ খুলতে সাহস করতেন না। কিন্তু বুধবার মাইকিংয়ের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে এলাকাবাসী সরাসরি পদক্ষেপ নেয়।
এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ মিয়া বলেন, “এই জরিপ করতে এসে মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। সরকার যেটা ডিজিটাল বলছে, ওরা সেটা ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে।”
অভিযোগ উঠেছে, ভূমি জরিপের কাজে যুক্ত কয়েকজন স্থানীয় দালালের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন হচ্ছিল। এসব দালালদের নামও প্রকাশ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোনো মন্তব্য না করলেও গোয়েন্দা পর্যায়ের তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার এই ঘটনাটি ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, অতীতের মতো যেন আবার ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ ধামাচাপা পড়ে না যায়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে