শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭, ২৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৯:০৩, ২৪ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-৩ জাকির হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মাসিক সভায় আলোচনার ভিত্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। পরিহার করতে বলা হয়েছে জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
ওই সভার কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে ১১ নম্বর ছিলো– যৌন হয়রানি, কর্মকর্তা–কর্মচারিদের আচারণ ও পোশাক সংশ্লিষ্ট। সেখানে বলা হয়, নারী সহকর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন, ২০০৩-এর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ গঠিত কমিটিতে পাঠাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বিষয়ে নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনা আরো বলা হয়, ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচারণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্টা থাকতে হবে। সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচারণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পারিক সম্মান, সৌজন্যতাবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব) মেনে চলতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, এক প্রতিষ্ঠানে সবাই এক ধরনের পোশাক পরবে, সেই লক্ষ্য থেকেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে।
তিনি বলেন, পোশাক নিয়ে যেন সাম্য ও ঐক্য থাকে, কোনো ধরনের মানসিক বৈষম্য না থাকে। আর শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি। তবে যারা পরবেন, তাদের সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে।
নির্দেশনার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেউ অশালীন পোশাক পরতেন কিনা জানতে চাইলে আরিফ হোসেন খান বলেন, না, কেউ পরেননি। তাহলে এ ধরনের নির্দেশনার প্রয়োজন হলো কেন, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন একেক ব্যাচে ২০০–২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা তরুণেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে প্রবেশ করছেন। তাদের মধ্যে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, এমন আচরণের প্রবণতা দেখা যায়। বেশ কিছুদিন এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পোশাক কী পরতে হবে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা শুধু অফিসের জন্য প্রযোজ্য। কেউ ব্যক্তিগত পরিসরে যেকোনো পোশাক পরতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) একটি বিভাগীয় মাসিক সভার এজেন্ডা ও কার্যবিবরণীতে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেসব সিদ্ধান্তের একটি ছিল পোশাক নিয়ে। গৃহীত সিদ্ধান্তের ১১ (ঘ) নম্বরে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সিওডি শ্রেণিভুক্ত কর্মচারীদের নির্ধারিত পোশাক ব্যতীত) সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পোশাক পরিধান নিয়ে এমন নির্দেশনা পেয়েছি। তবে আমি অবাকই হয়েছি। কারণ এমন নির্দেশনা প্রত্যাশিত ছিল না।
পোশাক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের নির্দেশনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, বৈষম্য দূর করতে পোশাকের বিষয় আসছে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো অফিসে কেউ অশালীন পোশাক পরে যায় নাকি? তিনি বলেন, পোশাক নিয়ে এ ধরনের নির্দেশনা আগে কখনো দেখিনি। তবে এখন সবকিছু মিলিয়ে এটি বোঝা কঠিন হচ্ছে না যে কেন এই নির্দেশনা এসেছে। এখন একটা সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই বলয় তৈরির প্রতিফলন থেকেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফওজিয়া মোসলেম আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হাজারটা কাজ রয়েছে। সেসব কাজ ফেলে কেমন পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করা জরুরি বিষয় ছিল না। নারী-পুরুষ পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে কিনা, সেটি তাদের দেখা উচিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ