শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০:০৬, ২৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নাসিক প্রশাসক এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ধূমপান কেবল ধূমপায়ীর ক্ষতি করে না, অধূমপায়ীর জন্যও তা সমান হুমকির। তাই আমাদের প্রথম কাজ হবে কর্মস্থলে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।’
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ সেবা নিতে আসেন। এখানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা মানে কেবল কর্মীদের নয়, আগত সেবাগ্রহীতাদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’ তিনি জানান, এই ধূমপানমুক্ত কর্মপরিবেশ গঠনের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, এটি একটি জনস্বার্থে নেয়া সামাজিক প্রতিশ্রুতিও।
সভাপতির বক্তব্যে নারী মৈত্রীর তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক শিবানী ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই উদ্যোগ একটি সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা মাত্র। আমরা চাই এই পরিবর্তন শুধু একটি অফিসে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ুক পুরো শহরজুড়ে।’ তিনি সিটি কর্পোরেশনের এই ঘোষণাকে নারীদের নেতৃত্বাধীন তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে নারী মৈত্রীর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী নাসরিন আক্তার মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তামাকজাত পণ্যের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাক ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। প্রতি বছর বহু মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। অথচ প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে হলে আমাদের কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধনের দাবি জানান। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দের কথাও জোর দিয়ে বলেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নগরভবনকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণার এই উদ্যোগ শুধু একটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সূচনা। ভবিষ্যতে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত কর্মপরিবেশে পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, লিফলেট বিতরণ, কর্মশালা ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন— নাসিক সচিব মো. নূর কুতুবুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজগর হোসেন, নারী মৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার এখনো আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যান। কর্মস্থল ও জনসমাগমস্থল ধূমপানমুক্ত করা গেলে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এই পদক্ষেপ তাই শুধু একটি প্রশাসনিক ঘোষণা নয়, এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি সাহসী সামাজিক বার্তা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে