শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৩, ১৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৯:১৪, ১৪ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলতাফ বেগ বলেন, এ বছর পরীক্ষা দেওয়া দুজন ছাত্রী বিবাহিত। তারা পূর্বে গণিতের পরীক্ষায় ফেল করেছিল, তবে গত এক বছরে তাদের কোনো ক্লাস হয়নি।
বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, এটি এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ১১ জন, শিক্ষার্থী সংখ্যা শতাধিক। অবশ্য স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন নিয়মিত উপস্থিতি থাকে মাত্র ১০-১২ জন শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে চার জন পরীক্ষার্থী ছিল, তবে তাদের কেউই পাস করতে পারেনি। তবে ২০২৪ সালে ছয়জনের মধ্যে চারজন পাস করেছে।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি; যার ৮৬টি মাদ্রাসা ও ৪৮টি বিদ্যালয়। গত বছর এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চারটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন, কুমিল্লায় একটি, যশোরে দুইটি, চট্টগ্রামে একটি, বরিশালে ১৬টি, দিনাজপুরে ১৩টি এবং ময়মনসিংহে ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রকাশিত ফলাফলে গড় পাসের হার এবং সর্বোচ্চ জিপিএ-৫’র সংখ্যা কমে গেছে। এবারে দেশে মোট ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল, তবে ৯৮৪টি প্রতিষ্ঠানে সবাই পাস করেছে। অথচ গত বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৯৬৮টি; যা এবার প্রায় এক হাজার কমে গেছে।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীপুর হাইস্কুল, নাঙ্গলকোটের ইসলামপুর হাইস্কুল, যশোরের মুলদাইর তালতলা মাধ্যমিক গার্লস স্কুল এবং পটুয়াখালীর কাছিয়াবুনিয়া আসমত আলী পণ্ডিত দাখিল মাদ্রাসা থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা এবং খারাপ ফলের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪১ শতাংশের বিয়ে হয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। এ বিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষার্থীও বিয়ের পর ক্লাসে অনিয়মিত ছিল; যার প্রভাব পরীক্ষার ফলাফলে পড়েছে।
এ ছাড়া বরগুনার সদর উপজেলার পুরাকাটা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৭ জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল, তবে তাদের সবারই ফলাফল খারাপ হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরাত জাহান বলেন, প্রতিবছর আমাদের ফলাফল ভালো হয়, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ১৭ জন ছাত্রীর মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে এবং তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, এ ধরনের শূন্য পাসের ঘটনা প্রতিবছর ঘটে থাকে, তবে এবার এর সংখ্যা বেড়েছে। শুধুমাত্র শূন্য পাস নয়, যেসব প্রতিষ্ঠানে ১০-২০ শতাংশ পাস করছে, সেগুলোর জন্যও পৃথক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠানের তদারকি সংক্রান্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ১০ জুলাই দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফল প্রকাশ করেছে।
এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী নয় লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন এবং ছাত্র নয় লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ