শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:২৩, ১১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৫৬, ১১ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
আর টানা বৃষ্টির অজুহাতে শাক-সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়; যা আগের সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০।
এ ছাড়া বেগুনসহ একাধিক সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির প্রভাবে বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
অন্যদিকে ডিমের বাজারে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি নয় টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকায়। মাসখানেক আগেও প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ১১ টাকা থেকে ১১ টাকা ২৫ পয়সা। পাইকারিতে দাম আরো কম। প্রতিটি ডিমের দাম নেমেছে আট টাকা থেকে আট টাকা ৮০ পয়সায়।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দামের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও অনেক কমে গেছে। আগে যারা প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার ডিম বিক্রি করতে পারতেন, এখন তাদের বিক্রি আড়াই থেকে তিন হাজারে নেমেছে।
খামারিরা বলছেন, বাচ্চার দাম কমে আসায় ডিমের বাণিজ্যিক চাহিদা কমে গেছে। অনেক বড় খামার বাচ্চা উৎপাদন না করে সেই ডিমগুলো বাজারে ছাড়ছে। এতে ডিমের দাম কমেছে। এ ছাড়া ফলের মৌসুম হওয়ায় অনেকেই সকালের নাশতায় ডিম না খেয়ে ফল খাচ্ছেন। এতেও বাজারে চাহিদা কমতে পারে।
বাজার তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ডিমের দাম কিছুটা কমই ছিল। তখন প্রতিটি ডিম নয় টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হতো। সেপ্টেম্বরে এসে হঠাৎ তিন দফায় দাম প্রতিটি ডিমে আড়াই থেকে তিন টাকা বেড়ে ১২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ওঠে।
তারপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা (প্রতিটি খুচরায় ১১ টাকা ৮৫ পয়সা) নির্ধারণ করে। যদিও এই দামের মধ্যে সব সময় আটকে থাকেনি, মাঝে মাঝে কিছুটা বেড়েছে।
বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫–১৭০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও সেটি ছিল ১৪৫–১৫০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০ টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছিল। এক বছর না যেতেই আবার সেই দামের কাছাকাছি চলে এসেছে বাজার।
বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, ফার্ম ও পরিবহনপর্যায়ে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন— বর্ষা মৌসুমে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন এবং ফিডের মূল্যবৃদ্ধিই দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ পেরোলেও এখনও রাজধানীর অধিকাংশ পরিবারে কোরবানির মাংস আছে। সেই কারণে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০, খাসির মাংস এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতিকেজি টমেটো ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০-১২০ টাকা, একইভাবে বেগুন ৯০-১০০ টাকা। করলা ৮০ টাকা, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, কচুরমুখি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকা, সজনেডাটা ১২০-১৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কাঁচকলা ৩০-৪০ টাকা হালি, বরবটি ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলু, মসলা,মাছ ও মাংসের দাম। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ৫৫-৬০ টাকা, দেশি আদা ১৩০-১৫০ টাকা, দেশি রসুন ১২০-১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১৪০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল (মোটাদানা) ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে ট্যাংরা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া–পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়। দেশি শিং ও কৈ মাছের দাম অবশ্য এখনো অনেক বেশি—প্রতি কেজি যথাক্রমে এক হাজার ২০০ ও এক হাজার টাকা।
রামপুরা বাজারে গৃহিণী হাসিনা আক্তার বলেন, গত সপ্তাহে তো ১৫৫ টাকায় কিনেছি ব্রয়লার মুরগি। আজকে হঠাৎ ১৭৫ বলছেন ক্যান? সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বাড়া কি স্বাভাবিক?
মগবাজারের দোকানি মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমরা তো নিজেরা দাম বাড়াই না। ফার্ম থেকেই মুরগির দাম এখন ১৬০–১৬৫ টাকা পড়ছে। আমাদের যদি ১০ টাকা লাভ না থাকে, চলবে কীভাবে? আমরাও তো কষ্টে আছি।
খিলগাঁওয়ে রেজাউল করিম নামের এক পোশাককর্মী বলেন, তিনদিন আগেও অফিসের পেছনের গলির দোকানে ১৫০ টাকা কেজি ছিল ব্রয়লার মুরগি। আজ বলল ১৭০! বাসায় বাচ্চাদের জন্য কিনি, নিজেরা তো যা পাই তা দিয়েই চলে। এত দাম দিলে তো মুরগিও বাদ দিতে হবে!
তিনি বলেন, এতদিন মুরগি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, আমার মতে এটিই ছিল ব্রয়লার মুরগির স্বাভাবিক দাম। এই দামে থাকলে গরিব-ধনী সবাই নিজেদের চাহিদামতো খেতে পারবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।
মহাখালিতে মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মুরগির দাম বাড়ছে ফার্ম থেকে। আমরা আগে যেখানে ১৪৫–১৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেখানে কিনতে হচ্ছে ১৬০–১৬৫ টাকায়। আমাদের যে খরচ, তাতে অন্তত ১৫ টাকা লাভ না রাখলে ব্যবসা টিকবে না। এই দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, কোনো কোনো গ্রাহক ভাবছেন আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরাও বিপদে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক, দোকান ভাড়া— সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভেই চলছি।
বনশ্রী এ ব্লক এলাকায় বাজার করতে আসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বললেন, আজকের বাজারে মুরগির দাম একটু বেড়েছে। গরু-খাসির দাম তো অনেক বেশি। সেই তুলনায় আমার মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য মাছ এখন সবচেয়ে ব্যালান্সড অপশন।
কারওয়ান বাজারে মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বললেন, ঈদের পর এখন লোকজন মাংস থেকে সরে মাছেই ঝুঁকছে। দামও বাড়েনি, আবার ভালো মাছ মিলছে, তাই বিক্রিও ভালো।
একই বাজারের শ্যামল মিয়া নামক আরেক বিক্রেতা বলেন, মাংস-মুরগির বাজারে দাম বাড়ছে, আর আমরা মাছওয়ালারা একটু স্বস্তিতে আছি। রুই কাতল আগের মতোই আছে, তাই মানুষ আসছে। পাবদা, তেলাপিয়া ভালো যাচ্ছে।
রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। বিক্রি নেই বললেই চলে। যারা কোরবানি দেয়নি, তারাও মাছ-মুরগিতে চলে গেছে।
মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা রইস উদ্দিন বলেন, যে কাঁচামরিচ আগের দিন কিনেছিলাম ১০০ টাকা কেজি, সেটা এখন কেনা লাগছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। ঢাকার বাইরে থেকে পণ্য আসছে না। আবার টানা বৃষ্টি হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, এ জন্য দাম একটু চড়া। তবে বৃষ্টি শেষ হলে দাম আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
মুসলিম হোসেন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ খুব কম। পাইকারি বাজার থেকে ২৫০ টাকার ওপরে কাঁচামরিচ কিনতে হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদেরও বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ডিমের ব্যবসায়ী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ডিমের দাম কোরবানির ঈদের আগে থেকে কমতে শুরু করে। কয়েক দফায় কমে এখন খুচরায় প্রতি ডজন ১২০ টাকায় নেমেছে। পরিচিত কাস্টমারদের কাছে আরো কমে বিক্রি করে দিই। কারণ এখন ক্রেতা অনেক কম। প্রতিদিন আমি এক গাড়ি (পাঁচ হাজার) ডিম বিক্রি করতে পারতাম। এখন এক গাড়ি বিক্রি করতে দুই দিন লাগে।
মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচসহ কিছু সবজির সরবরাহ অনেক কম। তাই দাম হঠাৎ বেড়েছে। পাইকারিতে বাড়লে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ