শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০২, ২১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১২:১২, ২১ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
এর মধ্যে এমন কিছু দলও রয়েছে যারা তাদের গঠনতন্ত্র, জেলা-উপজেলা কমিটি এবং নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো মৌলিক শর্তগুলো পূর্ণ করতে পারেনি। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পর্যন্ত নিবন্ধন শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে ত্রুটি দেখিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ইসি এসব দলকে ১৫ দিন সময় দিয়ে তাদের আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য সংশোধন ও পূর্ণ করতে চিঠি পাঠিয়েছে। গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই সময়সীমার মধ্যে ৬২টি দল এবং ৮২টি দলকে তাদের আবেদন সংশোধনের জন্য নির্ধারিত সময় দেওয়া হয়। এসব চিঠিতে প্রতিটি দলের আবেদন প্রক্রিয়া, অনুপস্থিত তথ্য এবং সংশোধনযোগ্য ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে চিঠিতে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা যথাযথ তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে।
আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার সময় বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির গঠন, কার্যকর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, জেলা ও উপজেলায় কার্যকর অফিস এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকাভুক্ত ২০০ জন সদস্যের উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এ ছাড়া, আবেদন ফি হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টিও বাধ্যতামূলক। কোনো দল এসব শর্ত পূরণ করতে না পারলে ইসি তাদের নিবন্ধন আবেদন বাতিল করে দেবে।
এ ছাড়া, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আবেদন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। প্রথমে ৬২টি দল নিবন্ধন প্রার্থিতা জানিয়ে আবেদন করেছিল এবং পরে ৮২টি দল দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করেছে। এর মধ্যে এনসিপিসহ ৪৬টি দলের অনুরোধে নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয।
এদিকে যত দিন যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে এসব আবেদনকারী দলের নেতাদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ দল ইসি থেকে চিঠি পাওয়ার পর জমা দেওয়া তথ্য সংশোধন ও নতুন কাগজপত্র প্রদান করার জন্য সেখানে আসছে। কেউ কেউ আবার ইসির চাহিদার বিপরীতে কী ধরনের তথ্য বা কাগজপত্র জমা দিতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছে।
নির্বাচনী সহায়তা ও ব্যবস্থাপনা শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন আবেদনের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে তারা দলের নেতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করার কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে, নির্বাচনী বিধি বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর অধীনে নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, জেলা-উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত সদস্য থাকতে হবে।
নিবন্ধন আবেদনের ত্রুটি সংশোধনের জন্য ১৫ দিন তথা ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে এনসিপিকে চিঠি দিয়েছে ইসি। চিঠিতে আবেদনের ত্রুটিগুলো তুলে ধরে বলা হয়, আবেদনে ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি। ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই। ঠিকানাসহ সব উপজেলা ও থানা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি। ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি। এসব থানা/উপজেলার ১০৮ থেকে ১৯৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে একই ভোটারকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আবেদনের সঙ্গে ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই। হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। দলীয় তহবিলের পরিমাণ এবং নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর না থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও উপজেলা বা ক্ষেত্রমত এবং জেলা কমিটির সদস্য কর্তৃক প্রস্তুত প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি। দলটির কোনো দলিল বা কার্যক্রমে সংবিধানপরিপন্থি নয়, দলে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের (ট্রাইব্যুনাল) অধীনে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা হয়নি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইসি থেকে এনসিপির নিবন্ধন আবেদনে কয়েকটি বিষয়ে ত্রুটি পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সেগুলো সংশোধনের পর্যায়ে এনে নির্ধারিত সময়ে তথ্য-প্রমাণাদি জমা দেবেন তারা।
সংবিধানবিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি–সংগঠন (সিএপিপি) আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম তালুকদার জানান, ইসি থেকে জানানো হয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিতে হবে। জেলা-উপজেলা কার্যালয় ও কমিটির শর্ত পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া ইসির নিবন্ধনের জামানত বাবদ যে পাঁচ হাজার টাকা তারা জমা দেননি, সেটিও চাওয়া হয়েছে।
একইভাবে নিবন্ধনের আবেদন করা বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা দপ্তরের বিষয়ে কোনো দলিল জমা দেয়নি। এ দলটি কোনো শর্ত পালন করেনি। বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টিও (বাজাপা) জেলা ও উপজেলা দপ্তরের দলিল এবং নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন ছাড়াই আবেদন জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টির কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের জন্য একটি ঠিকানা দিয়েছে। এ দলটি ৫টি নির্দেশনা পালন করেনি। বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের আরপিওর ১০টি শর্ত মানেনি।
এ ছাড়া শর্ত পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ-তিসারী-ইনসাফ দল, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড পার্টি, বাংলাদেশ আজাদী পার্টি (বিএপি), জাতীয় ন্যায়বিচার পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টি (বিডিএম), দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) এবং বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইসির চিঠির জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত আবেদনকারী সব দলের কাছ থেকেই কোনো না কোনো তথ্যের ঘাটতি পাওয়া গেছে। আমরা সব দলকেই ১৫ দিনের মধ্যে ওই ঘাটতি পূরণের জন্য চিঠি দিয়েছি এবং সময়মতো শর্ত পূরণ না করলে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ