ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মুহররম ১৪৪৭

বিধ্বস্তের আগে সাহায্য চেয়ে যা বলেছিলেন পাইলট তৌকির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০:১৯, ২২ জুলাই ২০২৫

বিধ্বস্তের আগে সাহায্য চেয়ে যা বলেছিলেন পাইলট তৌকির

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার কুর্মিটোলা পুরোনো এয়ারফোর্স বেস থেকে সোমবার তৌকির ইসলাম একটি এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করেন। এরপর উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা এলাকার আকাশে দীর্ঘ সময় বিমান চালান। একপর্যায়ে উত্তরা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি টের পান। দ্রুত তিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাহায্য চেয়ে বলেন, বিমান আকাশে ভাসছে না। মনে হচ্ছে বিমান দ্রুত নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। এ সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তাকে দ্রুত ইজেক্ট করতে বলা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এর দেড় মিনিটের মাথায় বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যায়।

বিমানবাহিনীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি আকাশে রাখার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি সর্বোচ্চ ম্যাক স্পিড তুলে কুর্মিটোলা এয়ার বেসের দিকে ছুটতে থাকেন। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কারণ জানতে দীর্ঘমেয়াদি এবং গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন হতে পারে।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম প্রশিক্ষণের শেষধাপে ছিলেন । এদিন প্রথমবারের মতো কো-পাইলট ছাড়াই আকাশে একা উড্ডয়ন করেন তিনি। কিন্তু এটাই যে তার জীবনের শেষ উড়াল তা কে জানত? অথচ প্রশিক্ষণে তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জটিল বিমান প্রশিক্ষণের বেশ কয়েকটি ধাপ সাফল্যের সঙ্গে উতরে যান। বৈমানিকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে শেষধাপ হিসেবে শুরু হয়েছিল সলো ফ্লাইট ট্রেনিং। এরপরই ফাইটার জেট ওড়ানোর পালা।

এদিকে তৌকিরের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে আসে। ইতোমধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার বিকালে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে তাদের ঢাকায় আনা হয়। সোমবার তৌকির প্রথমবারের মতো একা বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করছেন- এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু দুপুর না গড়াতেই বজ্রপাতের মতো আসে দুঃসংবাদ।

স্বজনরা জানান, তৌকির বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে- এমন খবর পেলেও পরিবারের সদস্যদের কেউই জানতেন না তৌকিরের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বলা হয়েছিল তৌকির আহত। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। পরে ঢাকায় এসে তারা মৃত্যুর সংবাদ পান। তৌকিরের বাবা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তার নাম তহুরুল ইসলাম এবং মা সালেহা খাতুন। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলেও তৌকিরদের পুরো পরিবার রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় বসবাস করেন।

বিমান দুর্ঘটনার খবরে স্থানীয় সাংবাদিকরা উপশহরে তৌকিরদের বাসার সামনে হাজির হন। একপর্যায়ে খবর পেয়ে স্থানীয়দের অনেকেই বাড়ি ঘিরে ভিড় করেন। সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে গেলে জানা যায়, তৌকিরের বাবা-মাসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তৌকিরের নানা, নানি ও খালাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় রয়েছেন বাসায়। সেখানে অবস্থান করে কিছুক্ষণ পরপরই ভেতর থেকে কান্নার রোল শোনা যায়।

তৌকিরের মামা মোতাকাব্বির উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেখানে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর তিনি পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি ২০১৭ সালে বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। মাত্র এক বছর আগে বিয়ে করেন তৌকির। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন