ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে বিএনপি-ইসলামী আন্দোলনও অপরাধী: জাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:০০, ৩০ জুলাই ২০২৫

ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে বিএনপি-ইসলামী আন্দোলনও অপরাধী: জাপা

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময়ে ভোটে অংশ নেওয়া তার দলের অপরাধ হয়ে থাকলে ২০১৮ সালে নির্বাচন করা বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, গণফোরামসহ সব দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি করা উচিত।

ওই সময় নির্বাচন করার কারণেই জাতীয় পার্টিকে এখন ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

বুধবার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টির ২০২৪ সালের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রেজাউল। তার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিব আখতার আহমেদের কাছে এ বিষয়ে অডিট রিপোর্ট জমা দেয়।

আগের দিন মঙ্গলবার গণঅধিকার পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগের মত জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটভুক্তদের নিবন্ধন স্থগিতের দাবি জানায়।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, আরপিওর বিধান অনুযায়ী দল নিবন্ধন পায় নির্বাচন কমিশনে। সেক্ষেত্রে কে কী দাবি জানাল, তাতে জাপার কিছু দেখার বিষয় নয়; আমরা আইন লঙ্ঘন করিনি।

তিনি বলেন, নির্বাচন করার কারণে আমাদের যে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা দেওয়া হচ্ছে, এ কথার সঙ্গে আমরা একমত নই।

রেজাউল বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ইসি নির্বাচন আহ্বান করেছে, দলের ইচ্ছে স্বাধীনতা রয়েছে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে আবার বর্জনও করতে পারে। তিন নির্বাচনে অনেকে বর্জন করেছে, অনেকে অংশ নিয়েছে। বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট, গণফোরামসহ অনেকে ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। বিএনপি চার বছর ওই সংসদে ছিল। যদি সেই নির্বাচন অবৈধ হয়, বিএনপির অংশগ্রহণও অবৈধ। জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি যদি উঠে, তাহলে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ৩২টি দল অংশ নিয়েছিল। ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে একই অপরাধে অপরাধী এসব দল।

সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিন মেয়াদে সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি। সেই সময়ের ভূমিকার জন্য ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে এখন দলটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চাইছে অভ্যুত্থানের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করছে, তাতে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসলেও জাতীয় পার্টির নেতারা সেখানে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না।

আগস্টের পর থেকে সেভাবে আর দলীয় কর্মূসচিও করতে পারছে না এরশাদের ভাই জি এম কাদেরর নেতৃত্বে থাকা দলটি। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে একাধিকবার হামলার মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের।

নাম উচ্চারণ না করে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির দিকে ইঙ্গিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে অংশ নেব। আমরা এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখছি না। আমরা দেখছি একটি অংশকে সরকার বেশি পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওই অবস্থা বিরাজমান যদি থাকে, তাহলে আমরা দলগতভাবে প্রেসিডিয়াম সভায় যখন সিদ্ধান্ত হবে, তফসিল ঘোষণা হলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসির কার্যক্রম এখন পক্ষপাতহীন বা পক্ষপাতদুষ্ট কিনা– তা নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য তারা করবেন না। কারণ এখনো এ ইসির অধীনে কোনো নির্বাচন হয়নি। এ নিয়ে বলার সময় এখনো আসেনি।

আজ ইসিতে জমা দেওয়া জাতীয় পার্টির ২০২৪ সালের অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় অভ্যুত্থানের বছরে বেড়েছে দলটির আয়-ব্যয়। গত বছর দলটি আয় করেছে দুই কেটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। আর বিদায়ী বছরটিতে জাতীয় পার্টির ব্যয় এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা।

জাতীয় পার্টি আয়ের উৎস হিসেবে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি, সদস্যের চাঁদা, প্রকাশনা বিক্রি ইত্যাদি খাত দেখিয়েছে। আর ব্যয় হয়েছে প্রচার কার্যক্রম, অফিস কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি খাতে।

এর আগে ২০২৩ সালে জাপা আয় করে দুই কোটি ২২ লাখ দুই হাজার ৪০৫ টাকা। আর সে বছর দলটির ব্যয় ছিল এক কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা।

তারও আগে ২০২২ সালে জাপার আয় হয় দুই কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৬৮ টাকা। পাশাপাশি ওই বছর ব্যয় হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪২ টাকা। আর ব্যাংকে স্থিতি ছিল এক কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪২৬ টাকা।

প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোর আগের বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর থেকে প্রতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করে ইসিতে জমা দেয় রাজনৈতিক দলগুলো।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন