শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৬, ৩১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২৫, ৩১ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বুধবার (৩০ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে চেক উদ্ধারের বিষয়টি জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তবে এই চেক কোন প্রতিষ্ঠান দিয়েছে, তা তিনি জানাননি।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ওই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয়েছে রংপুর-৬ আসনে (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে। ট্রেড জোনের পোশাক কারখানাসহ নানা ব্যবসা রয়েছে।
ট্রেড জোনের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সোয়া দুই কোটি নয়, মোট পাঁচ কোটি টাকার ১১টি চেক নিয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক রিয়াদসহ ছয়জন। তবে একটি চেকের বিপরীতেও তারা টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোতে ট্রেড জোন কর্তৃপক্ষ টাকা রাখেনি। তিনি বলেন, টাকা উত্তোলন করতে না পেরে রাজ্জাকসহ অন্যরা ট্রেড জোনের মালিককে হুমকি দিচ্ছিলেন।
শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর দ্বিতীয়বার টাকা নিতে গিয়ে ১৭ জুলাই হাতেনাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন আবদুর রাজ্জাকসহ পাঁচজন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামির এখন রিমান্ড চলছে। ঘটনাটিতে মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর।
ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। পরে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য। গ্রেপ্তারের পর সবাইকে বহিষ্কার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় বাদে অন্য সব কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনটি ছিল সমসাময়িক বিষয় নিয়ে। সেখানে সাংবাদিকদের ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাখালপাড়ায় রিয়াদের ভাড়া বাসা থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় আলাদা একটি মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তালেবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বাইরে আরো কেউ জড়িত আছেন কিনা, সেটি দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা যে চারটি চেক উদ্ধার করেছে, তার দুটিতে এক কোটি করে দুই কোটি, একটিতে ১৫ লাখ ও আরেকটিতে ১০ লাখ টাকার অঙ্ক উল্লেখ রয়েছে।
ট্রেড জোনের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক আবুল কালাম আজাদ। আমার কাছ থেকেই পাঁচ কোটি টাকার চেক নেন রিয়াদসহ ছয়জন।
আবুল কালাম আজাদ ২০০৯ সালে রংপুর-৬ আসন থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী হয়েছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ওই আসনটি ছেড়ে দেন। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
আবুল কালাম আজাদ পরে আর নির্বাচন করেননি বলে উল্লেখ করে ট্রেড জোনের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি (আবুল কালাম আজাদ) রাজনীতি থেকেই সরে গিয়েছিলেন। কারণ, মতের মিল হয়নি।
সাইফুল বলেন, সম্প্রতি আমাদের প্রতিষ্ঠান একটি জমি বিক্রির উদ্যোগ নেয়। আমাদের ধারণা, ওই জমি কেনাবেচার মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তি রিয়াদদের এই খবর দেন। রিয়াদসহ ছয়জন গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় ট্রেড জোনের গ্রিন রোডের কার্যালয়ে গিয়ে জোর করে সবার ফোন নিয়ে নেন। তারা দাবি করেন যে ভবনের নিচে শ দুয়েক লোক উপস্থিত রয়েছে।
রিয়াদরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, তারা ওই ছবি পাশে রেখে স্যারের (আবুল কালাম আজাদ) ছবি তোলে। জুতার মালা পরানোর হুমকি দিয়ে নগদ টাকা চায়। যদিও তারা অফিসে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে নগদ টাকা পায়নি। এরপর চেক বই বের করে জোর করে ১১টি চেকে পাঁচ কোটি টাকা লিখে নেয়। জোর করে সইও নেয়।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তাদের উদ্ধার করা চারটি চেকে সই ও প্রতিষ্ঠানের সিল রয়েছে। তবে গ্রহীতা ও তারিখের ঘর ফাঁকা পাওয়া গেছে।
সাইফুল বলেন, রিয়াদরা ব্যাংকে কয়েকটি চেক জমা দিয়েছিলেন। তবে ওই হিসাবে টাকা রাখা হয়নি। তারা কোনো টাকাই তুলতে না পেরে আবুল কালাম আজাদকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই চাঁদা দাবি করা ব্যক্তিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন বলে গণমাধ্যমে দেখেন তারা। ট্রেড জোনের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজির মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয় ২৭ জুলাই। এ ঘটনা ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। রিয়াদের নোয়াখালির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার অসচ্ছল পরিবার হঠাৎ ছাদ ঢালাই করে বাড়ি করছে। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতেন।
গুলশানে চাঁদাবাজির বিষয়ে ফেসবুকে গত শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শিকড় অনেক গভীরে।’
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ