শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২০, ৩০ মে ২০২৫
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি মাসের শুরুতে ইসলামাবাদে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস নাজারোভ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হারুন আখতার খানের মধ্যে বৈঠকে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এর মূল লক্ষ্য—১৯৭৩ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মিত পাকিস্তান স্টিল মিলসকে (PSM) পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণ।
২০১৫ সাল থেকে বন্ধ থাকা এই কারখানা একসময় বছরে ১১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করত। তবে বছরের পর বছর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসানের মুখে পড়ে।
চলমান প্রকল্পের আওতায় করাচির কাছে মূল ১৯ হাজার একর জমির মধ্যে ৭০০ একরে নতুন অবকাঠামো নির্মিত হবে। পাকিস্তানের মাটিতে থাকা সংরক্ষিত ১ বিলিয়ন টনেরও বেশি লোহার আকরিক ব্যবহার করে উন্নত রুশ প্রযুক্তিতে চালু হবে উৎপাদন।
প্রকল্পটি সফল হলে পাকিস্তান তাদের বার্ষিক ইস্পাত আমদানি খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র গত মার্চেই পাকিস্তান স্ক্র্যাপ ও আধাপাকা ইস্পাত আমদানিতে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
যদিও রাশিয়া দাবি করছে এই চুক্তি নিছক অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ, তবু বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের শিল্প ও প্রযুক্তিগত অংশীদারত্ব ভবিষ্যতে গভীর কৌশলগত সম্পর্কের পথ তৈরি করতে পারে।
ভারতের জন্য বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এই কারণে যে, ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া ছিল দিল্লির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা ও শক্তি সহযোগী। ভারতের অস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো রুশ নির্মিত। তাছাড়া চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, যেমন—রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠতা, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন দিক—রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখতে প্ররোচিত করছে দিল্লিকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া যদি ইসলামাবাদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য অনেকটাই বদলে যেতে পারে। এই চুক্তিকে অনেকেই মনে করছেন “একটি বৃহত্তর পুনঃসমন্বয়ের সূচনা”, যা ভারত-রাশিয়ার ঐতিহাসিক মৈত্রীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাশিয়া আপাতদৃষ্টিতে এটিকে অর্থনৈতিক প্রকল্প হিসেবে উপস্থাপন করলেও, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে—দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ কৌশলগত দিক থেকেও গভীর প্রতিফলন ফেলে। ফলে পাকিস্তান স্টিল মিলসকে ঘিরে এই নতুন রুশ-পাকিস্তান উদ্যোগ শুধু শিল্প নয়, ভবিষ্যতের আঞ্চলিক বলয়ের গতিপথও নির্ধারণ করতে পারে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ