শিরোনাম
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩:১১, ২০ মে ২০২৫ | আপডেট: ২৩:১৩, ২০ মে ২০২৫
রাঙামাটি ভাসমান মৌসুমী ফলের হাটে। ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ চলছে। জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই মধু মাস। আর এই মাসে পাহাড়ি এই জেলার হাটবাজারগুলো আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারসে ম-ম করবে না, তা তো হতে পারে না। শনিবার ভোরে সমতাঘাটে সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে সেই দেখাই মিলল। ভাসমান বোটে নানান মৌসুমী ফলমূলে ভরপুর। আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফলমূল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সমতাঘাটে নিয়ে আসে। আর ঘাটে তরী ভিড়তেই পাইকারদের দরদামে বিকিকিনির পর্ব শুরু হয়। অতএব, দরাদরি শেষে নৌকার পণ্য ঠাঁই হয় ট্রাকে, আর সেই ট্রাক চলে যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানায়, রাঙামাটির হাটবাজারগুলোতে মৌসুমের প্রথমেই আসে আনারস। আনারস সাধারণত চৈত্র-বৈশাখের ফল হলেও বর্তমানে রাঙামাটির বাজারে আনারস মেলে শীতের শুরু থেকেই। যা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলে। শীতকালে ব্যাপক পর্যটক সমাগম থাকায় আগাম আনারস বাজারে উঠলেই ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই তো চাষীরা হরমোন প্রয়োগ করে আগাম আনারস হাটে নিয়ে আসে। মৌসুমের শেষদিকে থাকা বর্তমানে এই ফলটি জোড়া ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এরপর চৈত্রে তরমুজ আসে হাটে। বৈশাখের অর্ধেক মাস পর্যন্ত এই ফলটি বাজারে থাকলেও বর্তমানে এই ফলটি বাজারে আর নেই। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসতে থাকে লিচু। বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশি ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজারে আসতে থাকে। মোটামুটি দেড় থেকে দুইমাস স্থায়ী এই মৌসুমী লিচু বর্তমানে হাটে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে চাষীরা জানালেন, এবছর প্রাকৃতিক নানান কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে। বাজারে দেশি লিচুর দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। দেশি লিচু আকারভেদে প্রতি ১০০টির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। চায়না থ্রি প্রতি ১০০ লিচুর দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত পড়ে।
চাষী ও ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশীয় পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম পাকা আম দাম বেশি হলেও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। চাষীরা আম ক্যারেট বা ঝুঁড়িপ্রতি বিক্রি করে থাকে। সাধারণত কেজি হিসাব ধরলে দেশি পাকা আম ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হচ্ছে। তবে পাহাড়ের জনপ্রিয় আম রাংগুই এখনো বাজারে আসেনি। কিছুদিনের মধ্যে রাংগুই আম বাজার দখল করবে বলে জানালেন চাষীরা।
ভাসমান বোটের বেশিরভাগ বর্তমানে দখল করে আছে আরেক সুস্বাদু মৌসুমী ফল, দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। চাষীরা জানালেন, এবছর কাঁঠাল ভালো উৎপাদন হলেও বাজারে দাম একেবারেই নেই বললেই চলে। পাইকাররা কাঁঠাল ২০-২৫ টাকার ওপর দাম তুলছেই না। এই দামে কাঁঠাল বিক্রি করলে এলাকা থেকে ঘাটে এনে বিক্রি করতে যে খরচ অর্থাৎ শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠেই না।
নানিয়ারচর উপজেলা থেকে কাঁঠালভর্তি বোট নিয়ে সমতাঘাটে হাজির হওয়া অমর জীবন চাকমা বলেছেন, এতোদূর থেকে কাঁঠাল নিয়ে সমতাঘাটে আসলাম, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে এক বোট নিয়ে এসেছিলাম, দাম না পাওয়ায় কাঁঠাল বিক্রি না করে নিয়ে গিয়েছি। এই সপ্তাহে আবারো কাঁঠাল আনলাম, কিন্তু দাম এই সপ্তাহেও পাচ্ছি না। ২০-২৫ টাকায় পাইকারদের কাছে কাঁঠাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
কাটাছড়ি থেকে আম নিয়ে আসা লাল মোহন চাকমা বলেন, এই বছর আমের ফলন কম হয়েছে, বেশি গরম এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। তবে বাজারে আমের দাম ভালো আছে বলে জানান তিনি। এছাড়া লিচুর দামও ভালো বলে তিনি জানালেন।
সমতাঘাটের বেশিরভাগ মৌসুমী ফল পাইকারা কিনে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা হাজির হয় এসব মৌসুমী ফল কিনতে। আমির হোসেন নামে চট্টগ্রাম থেকে আসা এক পাইকার বলেছেন, কাঁঠালের দাম ভালো পেয়েছি, তবে আম, লিচুর দাম বাড়তি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩ হাজার ৬২৮ হেক্টর আম, ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর কাঁঠাল, ১৯ হাজার ৩ হেক্টর লিচু ও ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টরে আনারস চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬,২০০ মে.টন, কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ৯৮,০২০ মে.টন, লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ১৩,৩০০মে.টন ও আনারসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩,২৫০ মে.টন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার উৎপাদিত ফলমূল স্বাদে ও মানে অনেক ভালো। বিশেষ করে এখানকার কলা ও পেঁপে। এই দুটি ফল সারাবছরই উৎপাদন হয়। এছাড়া রাঙামাটিতে উৎপাদিত লিচু ও কাঁঠাল ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে প্রচুর পরিমাণে যাচ্ছে। তবে এবার লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে, অন্যান্য ফলগুলো যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটা অর্জিত হবে বলে আশা করছি। বছরে পার্বত্য এলাকা থেকে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়, তার আর্থিক মূল্য ৫০০ কোটি টাকা বলে জানান এই কৃষি কর্মকতা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসইউ