শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:২৯, ১ জুন ২০২৫
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৭ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখতে চাওয়া হচ্ছে ৬.৫ শতাংশে।
বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাজেট প্রণয়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)–এর পরামর্শ বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমানো, সুশাসন জোরদার, টার্গেটেড ভর্তুকি এবং কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণে বাজেটে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে। রাজস্বনীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়েও থাকবে জোর।
এ বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা— যা আগের বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.৬৫ শতাংশ বেশি।
সরকারি ব্যয়ের বড় একটি অংশ বরাদ্দ করা হবে বেতন, ভাতা, ভর্তুকি ও ঋণ পরিশোধে। শুধু বেতন ও ভাতা বাবদ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা সামগ্রিক ব্যয় আরও বাড়াবে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হতে পারে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধে যাবে বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে স্বল্পমেয়াদি চাপ কমাতে সরকার বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকবে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ খুব বেশি না বাড়লেও এগুলো থাকবে অগ্রাধিকার তালিকায়। খাদ্য ভর্তুকি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কর্মসূচিতে কিছুটা বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে। প্রতিরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও সামাজিক কল্যাণ খাতে বরাদ্দ কিছুটা কমতে পারে। স্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। কৃষি ও সড়ক পরিবহন খাতে বরাদ্দ পূর্বের মতোই থাকবে।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভ্যাট ও কর ব্যবস্থায় সংস্কার আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে—
-১৫ শতাংশ অভিন্ন ভ্যাট হার
-ডিজিটাল কর রিটার্ন দাখিল ব্যবস্থা
-বার্ষিক ৫০ লাখ টাকার লেনদেনকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর অন্তর্ভুক্তি (আগে ছিল ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ছাড়)
-ভ্যাট নিবন্ধনের নিয়ম আরও কঠোর করা
মোট বাজেট ব্যয়ের প্রায় ৩৮ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়।
-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
-রাজস্ব আদায় বাড়ানো
-অভ্যন্তরীণ খরচ কমিয়ে বিদেশি সহায়তার ওপর জোর
-সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রেখে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ
-কর ব্যবস্থার ডিজিটাল সংস্কার
-আইএমএফের সুপারিশ বাস্তবায়ন
প্রস্তাবিত বাজেটটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাস্তবভিত্তিক ও নিয়ন্ত্রিত খরচের একটি রূপরেখা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ