শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:৫৫, ৩০ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
প্রস্তাবটি গত ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হলে এটি কমিশনে সরাসরি হস্তান্তর করা হবে।
এনসিপির প্রস্তাব অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে সংসদীয় আসনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ ভোট থাকা বাধ্যতামূলক।
সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও অন্যান্য বিরোধী দল এই কমিটিতে তিনজন করে মোট নয়জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবে প্রধান উপদেষ্টা পদে। কোন দল কাকে প্রস্তাব করেছে, সেটি প্রকাশ্য করতে হবে জনগণের কাছে। এরপর সংসদীয় কমিটি আট-তিন ভোটের মাধ্যমে একজন প্রধান উপদেষ্টার নাম চূড়ান্ত করবে।
এই পদ্ধতিতে সম্মতি না এলে পরবর্তী ধাপে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের জন্য উচ্চকক্ষে 'র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং' পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচিত ব্যক্তি হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয়। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, অঙ্গসংগঠনের কর্মী বা সমর্থক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে, অথবা অতীতে দলীয় বক্তব্য পেশ করার নজির থাকলে তাকে প্রধান উপদেষ্টার পদে নিয়োগযোগ্য বলে বিবেচনা করা যাবে না। একই সঙ্গে দুর্নীতি বা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত, কিংবা নৈতিক স্খলনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকলেও তিনি এই পদে অযোগ্য হবেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে মিল রেখে এনসিপিও প্রস্তাব করেছে যে, নির্বাচনকালীন এই সরকার হবে সীমিত সময়ের জন্য— সর্বোচ্চ ৯০ দিনের। এই সরকার পরিচালনার জন্য একজন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টাদের মনোনয়ন দেবেন।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সরকারের নাম হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার’ বা ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার’— উভয় নামই প্রস্তাব করেছে। দলটির মতে, নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
এনসিপির প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারের বিধানটি যেন ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সুবিধানুসারে বাতিল বা পরিবর্তন করা না যায়, সে জন্য এটি সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশও করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, অতীতে দেখা গেছে, নির্বাচিত হয়ে অনেক রাজনৈতিক দল অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল নেয়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হলে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি স্থায়ী কাঠামো প্রয়োজন। এনসিপির প্রস্তাব সেই কাঠামো গঠনে সহায়ক হবে।
তিনি আরো বলেন, সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা নির্বাচন হলে সরকারি দলের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সুযোগ থাকবে না। এতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় সব দলই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে সরকার পরিচালনার কাঠামো ও উপদেষ্টাদের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হলে এসব বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ