শিরোনাম
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:২৮, ৩ জুলাই ২০২৫
সখীপুর উপজেলার দুই শিক্ষার্থী—সায়মা আক্তার ও লাবণী আক্তার—মায়ের মৃত্যুর পরও লাশ ঘরে রেখে অংশ নিয়েছেন পরীক্ষায়। জীবনের কঠিনতম মুহূর্তে বুক ভরা কষ্ট নিয়েই তাঁরা বসেছেন উত্তরপত্রের সামনে।
সায়মা আক্তার উপজেলার হতেয়া গ্রামের রায়হান খানের মেয়ে। তিনি হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) তাঁর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল সখীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে। কিন্তু আগের দিন বুধবার গভীর রাতে কিডনিজনিত জটিলতায় মারা যান তাঁর মা শিল্পী আক্তার (৪০)।
অন্যদিকে লাবণী আক্তার কচুয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ছাত্রী লাবণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল বৃহস্পতিবার, বিষয়—‘বিজনেস ইংলিশ অ্যান্ড কমিউনিকেশন’। তার আগের রাতে, বুধবার ৯টার দিকে মারা যান তাঁর মা সফিরন নেছা (৪৫)।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন দুই শিক্ষার্থীই। স্বজনদের কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা গেছে—‘মা ছাড়া কেমন করে যাব?’ তবু আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকদের অনুরোধে তাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে যান। একজন পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরেন জানাজায় অংশ নিতে, অন্যজন পৌঁছান ঠিক জানাজার আগ মুহূর্তে।
হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, "সায়মার মনোবল দেখে আমরা হতবাক। চোখে পানি, কিন্তু কলম থামায়নি।" একইভাবে, লাবণীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এমন কষ্টের সময়েও মেয়েটি পরীক্ষা দিয়েছে—এটা শুধু সাহস নয়, আত্মত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।”
সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসাইন জানান, “লাবণী পরীক্ষার পুরো সময়টায় চুপচাপ ছিলেন। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। এক নারী শিক্ষক তাঁকে নিজে বাড়ি পৌঁছে দেন।”
দুই ছাত্রীর এই লড়াই শুধু একদিনের নয়, মায়ের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধকে হৃদয়ে ধারণ করে তাঁরা এগিয়ে চলেছে জীবনের পথে। তাদের এই সাহস ভবিষ্যতের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ