ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

চা উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে রপ্তানি 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১১:০০, ২১ মে ২০২৫

চা উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে রপ্তানি 

ছবি: সংগৃহীত

দুই দশক আগে চা রপ্তানিতে যে জৌলুস ছিল, বাংলাদেশ সেই অবস্থান হারালেও ২০২৪ সালে চা রপ্তানিতে ফিরতে শুরু করেছে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত। যদিও একই সময়ে চায়ের উৎপাদন কমেছে প্রায় এক কোটি কেজি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ১০ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়; যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ২০২৪ সালে উৎপাদন কমে দাঁড়ায় নয় কোটি ৩০ লাখ কেজিতে। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন কমেছে প্রায় ৯৯ লাখ কেজি।

তবে আশার খবর হলো, উৎপাদন কমলেও রপ্তানিতে এসেছে বড়সড় সাফল্য। ২০২৩ সালে যেখানে রপ্তানি হয়েছিল ১০ লাখ চার হাজার কেজি চা, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৫০ হাজার কেজিতে। টাকার অঙ্কে এর মূল্য ৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

চা বোর্ড জানিয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ ১৩টি দেশে চা রপ্তানি করলেও এবছর রপ্তানির গন্তব্য বেড়ে হয়েছে ১৯টি দেশ। এতে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে এক কোটিরও বেশি কেজি চা রপ্তানি করতো বাংলাদেশ। ২০০২ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ— এক কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি, যার মূল্য ছিল প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। তবে ২০১০ সালের পর রপ্তানি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ২০১৩ সালে এসে তা নেমে আসে মাত্র পাঁচ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে।

বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে মান ও দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় বাংলাদেশ চা রপ্তানিতে এমন ধস দেখে। তবে এখন নতুন বাজার ও সরকারি প্রণোদনার কারণে কিছুটা গতি ফিরে পাচ্ছে খাতটি।

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, দেশে চায়ের চাহিদা বাড়ছে, আবার রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সহায়তা পেলে বাংলাদেশের চা আবার বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।

একদিকে চা রপ্তানি বাড়ছে, অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানিও বাড়ছে। ২০২০ সালে দেশে ছয় লাখ ৮০ হাজার কেজি চা আমদানি হলেও ২০২৩ সালে তা দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ কেজিতে। আমদানি হওয়া চায়ের বেশিরভাগ উন্নতমানের; যা মূলত উচ্চবিত্ত শ্রেণি এবং অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বার্ষিক চায়ের বাজার এখন প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। গ্রামের মানুষের মধ্যেও এখন চা পানের প্রবণতা বেড়েছে; যা অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

বর্তমানে দেশে দুই লাখ ৮০ হাজার একরের বেশি জায়গাজুড়ে ১৬৯টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯০টি বাগান, যেখান থেকে দেশের ৫৫ শতাংশ চা উৎপাদিত হয়। হবিগঞ্জ থেকে আসে ২২ শতাংশ। উত্তরবঙ্গেও চায়ের চাষ বাড়ছে, তবে উৎপাদনে এখনো সেগুলোর অবদান তুলনামূলক কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি চায়ের মান ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সমস্যা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের চায়ের দাম প্রায় দ্বিগুণ।

অর্থিনীতিদিদ ও চা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রপ্তানি বাড়াতে হলে নতুন জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকীকরণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, চা রপ্তানিতে ধারাবাহিক অগ্রগতি হচ্ছে। বিশেষ করে, গত বছর থেকে দুই শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এই পটভূমিতে আজ বুধবার (২১ মে) দেশে পালিত হচ্ছে পঞ্চম জাতীয় চা দিবস। এবছরের প্রতিপাদ্য- ‘চা দিবসের প্রতিশ্রুতি, চা শিল্পের অগ্রগতি।’ সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই প্রতিপাদ্য অনুযায়ী কাজ করলে বাংলাদেশের চা শিল্প আবারও রপ্তানিতে উজ্জ্বল সাফল্য পেতে পারে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন