ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে শহিদ মিনারে না আসার আহ্বান
Scroll
ইঞ্জিন সংকটে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা, বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর
Scroll
ইউক্রেনে ন্যাটোর সেনাদের মেনে নেবে না রাশিয়া
Scroll
‘গঙ্গা পানি চুক্তি’ নবায়ন আলোচনায় মার্চে ভারত যাচ্ছে কারিগরি দল
Scroll
দিল্লিতে চলছে বিজিবি-বিএসএফের ৩ দিনের সম্মেলন
Scroll
কুয়েটে ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা
Scroll
দেশের বাজারে জুতার নতুন ব্র্যান্ড আনছে টি কে গ্রুপ
Scroll
এ অভ্যুত্থান সবার, সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে: মাহফুজ আলম
Scroll
অবশেষে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সম্মত রাশিয়া
Scroll
কুয়েটে হামলা: ঢাবিতে বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের আলাদাভাবে বিক্ষোভ
Scroll
নাইকো দুর্নীতি মামলার রায় আজ

সালতামামি ২০২৪

দারুণ বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশ: ১৫:৪৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৭:১৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দারুণ বছর পার করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। এর মধ্যে পুরো বছরের পাওয়া আর না পাওয়ার জটিল সমীকরনের হিসাব মেলালে দেখা যায় নারী ফুটবলারদের অর্জনের পাল্লা বেশ ভারী। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা অসাধারন একটি বছর পার করল। সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কেমন কাটলো তাদের এ বছরটি।

বছরের শুরুতে হার

বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা বছরের শুরুতে হোঁচট খেয়েছিল। ২০২৪ সালের ৩১মে মাঠে নেমে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে মাঠে নেমে ৪-০ গোলের ব্যবধানে হারের লজ্জা পেতে হয় তাদের কাছে হারে। পরের ম্যাচে প্রাণপন লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে বাংলাদেশকে হারতে হয়। এর আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরকে ৮-০ গোলে বিদ্ধস্ত করেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা।

ভুটানের বিপক্ষে জয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো

জুলাই মাসে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে ৫-১ গোলে বাজিমাত করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পরের ম্যাচে তাদের অবশ্য দুটি গোল হজম করতে হয়েছিল সাবিনাদের, তবে দিয়েছিল ৮টি গোল। পুরো বছরে মোট ৮টি ম্যাচ খেলে প্রায় সবগুলোতে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলার মেয়েরা। শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করেছিল।

টানা দ্বিতীয়বার সাফে চ্যাম্পিয়ন 

বছরের শেষটা এই মেয়েরাই রাঙিয়েছে পরপর দুবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়ে। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হোঁচট খায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ধারণা করা হয়, দলীয় কোন্দল, কোচ নিয়ে বিভক্তি সহ নারী ফুটবল দলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। অক্টোবর মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে বাংলাদেশ যখন নেপালে, প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে বসে বাংলাদেশ। এর মাঝে বাফুফের নির্বাচনী প্রচারনা, নারী খেলোয়ারদের বেতন না দেয়া সহ নানামুখী সমস্যার সমাধান তখনো হয়নি।

এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে বাংলার মেয়েরা। ২৩ অক্টোবর কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে ভারতের জালে গুণে গুণে ৩টি গোল করলেন তহুরা-সানজিদারা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে বাংলাদেশের জয় ৩-১ গোলে। আর তাতেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।

এমন জয়ের পর সব কোন্দল যেন উড়ে যায় মুহূর্তেই। সব সমালোচনা, সব অভিযোগ তখন আর কিছুই যেন নেই। বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষুধা যেন মেটেনি। তাদের ক্ষুধা আরও বেড়ে যায়। তাইতো সেমিফাইনালে ভুটানকে পেয়ে তাদের জালে গোল দিলো ৭টি। বিপরীতে অবশ্য একটি গোল হজম করতে হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে আর মাত্র একটি ধাপ। এই ধাপ পেরোতে পারলেই ব্যাক টুক ব্যাক সাফ চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। এমন স্বপ্ন নিয়েই গত ৩০ অক্টোবর সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামে তহুরা-সানজিদারা। শেষ পর্যন্ত তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো উইমেন্স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।

পরদিন ছাদখোলা বাসে প্রথম সংবর্ধনা

পরদিন ৩১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সাফজয়ী ফুটবলাররা। সেখানে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানবন্দর থেকে এক্সপ্রেসওয়ে, এফডিসি, সাত রাস্তার মোড়, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল, পল্টন, নটর ডেম কলেজ, শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবনে পৌঁছায় সাফজয়ী ফুটবলারদের বহনকারী ছাদখোলা বাস। মেয়েদের জাতীয় দলের পরিসংখ্যানটাও বেশ ভালো। ৮ ম্যাচে ৫ জয়। এক ড্র, দুটি হার।

আরও একটি ছাদ খোলা বাস

টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের পর সেই ছাদখোলা বাসের কথাটা আবারও সামনে আসে। সাথে সাথেই ছাদখোলা বাসের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছিল ফেডারেশন। তাদের জন্য বিমানবন্দরে রাখা ছিল ছাদখোলা বাস।

তার আগে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন তাবিথ আউয়াল। দীর্ঘদিন পর শেষ হয় সালাউদ্দিন অধ্যায়। নতুন সভাপতি মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে অর্থের দিকেও তাকাননি। ছাদখোলা বাসের সব খরচ তো ফেডারেশনই বহন করেছিল।

বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন কোচ বাটলার আর অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে দলটি ছাদখোলা বাসে চড়ে বাফুফে ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। যেখানে ছিলেন সমর্থকরা, ছিলেন সাংবাদিকরাও। বাংলাদেশ ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু যে ভবনকে ঘিরে, সেই ভবনেই চলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন বাফুফে ভবনে নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসও নারী দলকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন ডেকে নিয়ে।

সব মিলিয়ে পুরো বছরটি বেশ ভালোই কেটেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। শিরোপা জিতেছে, ফুটবলাররা পেয়েছেন সংবর্ধনা, সেইসাথে পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। মেয়েরাও দেশকে উপহার দিয়েছেন দারুণ এক অর্জন; যা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বেতন-ভাতার নাম নেই, সংবর্ধনা নিয়ে মাতামাতি

তবে সাফল্যের সবচেয়ে বেমি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল পাশাপাশি বেতন ও ম্যাচ ফি বকেয়া রাখার কারণে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে বকেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। এএফসি কংগ্রেস থেকে ফিরে সম্প্রতি বাফুফের নির্বাহী সদস্য ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ দৃঢ় কন্ঠে দাবি করেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফেডারেশন ফুটবলারদের বেতন দেয় না, ফুটবলাররা ক্লাব থেকে আয় করে। শুধু বাংলাদেশ দেয় কারণ আমাদের প্রেক্ষাপট আলাদা।’ এরপর অবশ্য সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়েদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয় বাফুফে থেকে।

বাফুফের নির্বাচন

এবারের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাবলী ছিল বাফুফের নির্বাচন। তোপের মুখে  সালাউদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সভাপতি পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল। নির্বাচনে সভাপতি পদে ১২৩টি ভোট পেয়েছেন তিনি, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ এফ এম মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন ৫ ভোট। এতে দীর্ঘ ১৬ বছর পর নতুন সভাপতি পায় বাফুফে।
এ বছর বয়সভিত্তিক ফুটবলে এসেছে তিনটি শিরোপা। প্রথমটি অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের সাফে। দ্বিতীয়টি মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। অনূর্ধ্ব-২০ ছেলেদের বিভাগে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

তাছাড়া, ৫ আগস্ট দেশে পটপরিবর্তনের পর স্পন্সররা সরে যাওয়ায় শেখ জামাল-শেখ রাসেলের মতো ক্লাব দল গড়েনি ঘরোয়া লিগে। গণঅভ্যুত্থানের আগে মে মাসে টানা পঞ্চমবার পেশাদার লিগ জিতে রেকর্ড গড়েছে বসুন্ধরা কিংস, বিদায়ী মৌসুমে জিতেছে লিগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপের ট্রেবলও।

আরও পড়ুন