শিরোনাম
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৫৫, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৫:১৮, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
সংসার, সমাজ, অর্থ আর আরাম আয়েশের মায়া কাটিয়ে একাগ্র ধ্যানে জীবন কাটাচ্ছেন রঞ্জিত রায় (৫৫)। তিনি নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বড়গ্রামের বাসিন্দা। ১২ বছরের জন্য মহাদেবের (শিব) সাধনায় নিজেকে পুরোপুরি নিবিষ্ট রেখেছেন তিনি। নির্জন কুটিরে বসবাস করে কঠোর ব্রত ও উপবাসে দিন কাটছে তাঁর।
উদ্দেশ্য একটাই—সংসার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে আত্মশুদ্ধি এবং মহাদেবের আরাধনায় জীবন উৎসর্গ করা।
জানা গেছে, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের রঞ্জিত চন্দ্র রায় সংসার, পারিবারিক জীবন এবং সবধরনের সামাজিক বন্ধন ত্যাগ করে নিমগ্ন হয়েছেন মহাদেবের কঠোর সাধনায়। ২০১৯ সালে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানে যাত্রা শেষে দেশে ফিরে দেওনাই নদীর তীরে নির্জন এক প্রাকৃতিক পরিবেশে শুরু করেন তার এই ব্যতিক্রমী ধ্যান-সাধনা।
সাধনার জন্য রঞ্জিত রায় প্রথমে মাটির নিচে প্রায় ১০ ফুট গভীর একটি গোলাকার কৃত্রিম গুহা তৈরি করেন। সেই গুহার নির্জনতায় তিনি শুরু করেন পূজা-অর্চনা এবং ধ্যানের কঠোর অনুশীলন। দিন, সপ্তাহ, মাস গড়াতে থাকে তার এ ধ্যানমগ্ন জীবনে। ইতিমধ্যেই পাঁচ বছর অতিক্রম করেছেন তিনি, আর বাকি সাত বছর কাটাবেন আরও গভীর ধ্যানে। ভবিষ্যতে তিনি অধিক সময় ভূগর্ভস্থ এই গুহাতেই কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন।
সাধনার শুরুর দিকে রঞ্জিত রায় আতপ চালের ভাত খেতেন। তবে ধীরে ধীরে তার খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে তার খাদ্যতালিকায় আছে কলা, ভুট্টা, চালের গুঁড়া, শাকসবজি এবং বিভিন্ন ফলমূল। এই খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন তার পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় ভক্তরা।
রঞ্জিত রায় সাধনার সময় কারো সাথে কথা বলেন না; প্রয়োজনীয় তথ্য এবং বার্তা কাগজে লিখে আদান-প্রদান করেন।
রঞ্জিত রায়ের এই ব্যতিক্রমী সাধনা নিয়ে তার পরিবারে কোনো অমত নেই। বরং তার ছেলে সিবু রায় জানান, "আমরা বাবার এই সিদ্ধান্তে খুশি। উনি যা করছেন, তা মহাদেবের প্রতি তার অগাধ ভক্তিরই প্রমাণ। আমরা তাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী সাহায্য করছি।"
এলাকার মানুষও রঞ্জিত রায়ের সাধনায় মুগ্ধ। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসে তাকে একনজর দেখার চেষ্টা করেন। তার এই সাধনা অনেকের মাঝেই কৌতূহল এবং ভক্তির সঞ্চার করেছে।
রঞ্জিত রায় লিখিত বার্তায় জানান, “সংসার হলো কামনা-বাসনার কেন্দ্র। ১২ বছর পার হলেও আমি আর সংসারে ফিরব না। তখন কথা বলব সবার সাথে, কিন্তু জীবন শেষ করতে চাই এখানেই। আমাকে যেন সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়।”
প্রতি বছর বর্ষাকালে তার মাটির তৈরি গুহা ভেঙে যায়। তবে এতে তার সাধনা থেমে থাকে না। পরিবারের সদস্যরা তখন ইট দিয়ে নতুন গুহা তৈরি করে দেন। গুহার নির্মাণ কাজ শেষ হলে রঞ্জিত রায় আবারও সেখানেই ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন।
শিবভক্ত রঞ্জিত রায়ের এই কঠোর ধ্যান-সাধনা ধর্মপাল ইউনিয়ন এবং আশেপাশের এলাকায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। অনেকেই তার এ পথকে আত্মশুদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ এটাকে কঠোর আত্মনিয়ন্ত্রণের এক দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন। তবে সকলের কাছেই রঞ্জিত রায়ের এই জীবনযাপন বিস্ময় এবং ভক্তির উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ