শিরোনাম
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯:২৭, ১৭ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৩০, ১৭ জুন ২০২৫
জনশ্রুতি অনুযায়ী, মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজার রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজি নূরজাহান, প্রায় আড়াইশ বছর আগে।
গল্পের শুরু মধ্যকুমিল্লার মাঝিগাছা গ্রামে। একদিন সাপে কাটা পড়ে মুমূর্ষু অবস্থায় কলাগাছের ভেলায় ভেসে যাওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করেন ত্রিপুরার রাজদরবারের প্রধান নর্তকী মেনেকা। চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার পর, মেনেকা তাকে নাচ-গান শেখান এবং ধীরে ধীরে রাজদরবারে পরিচিত করে তোলেন।
পরবর্তীতে, সেই কিশোরী নূরজাহান হয়ে ওঠেন রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজি। কয়েক বছর রাজদরবার মাতিয়ে তোলার পর, বয়স চল্লিশ পেরোলে মহারাজার নির্দেশে অবসর নেন তিনি। পুরস্কারস্বরূপ পান নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও মাঝিগাছা গ্রামে কয়েক একর জমি।
গ্রামে ফিরে নিজেকে জমিদারের বিধবা স্ত্রী পরিচয়ে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন নূরজাহান। দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন নিয়মিত। কিন্তু তার অতীত জীবনের জন্য মনে ছিল গভীর অনুশোচনা। এক হুজুরের পরামর্শে পাপমোচনের আশায় একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত হয় প্রথম নামাজের দিন। হুজুর নিজেই ইমামতি করবেন, এই আশ্বাসে সবাই প্রস্তুত। কিন্তু নামাজের আগে হুজুর যখন মসজিদ নির্মাণের পেছনের গল্প বলেন এবং নূরজাহানের অতীত পরিচয় প্রকাশ করেন, তখন উপস্থিত মুসল্লিরা একসঙ্গে বলে ওঠেন, এটি তো নটীর মসজিদ, এখানে আমরা নামাজ পড়ব না!
সেই দিন থেকেই আর কোনো আজান হয়নি, হয়নি কোনো নামাজ।
চরম অপমান আর হৃদয়বিদারক প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন নূরজাহান। তাঁকে দাফন করা হয় মসজিদের পাশেই।
বটগাছের শেকড়ে জড়ানো সেই মসজিদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। লোকমুখে মসজিদটি পরিচিত ‘নটীর মসজিদ’ নামে এক নারী, এক ইতিহাস, এক ব্যতিক্রমী নির্মাণের গল্প হয়ে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ড.আতাউর রহমান বলেন, এটি বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেছেন। কুমিল্লা নগরীর নিকটবর্তী গোমতীর পাড়ের মসজিদটি সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড.নাহিদ সুলতানা জানান, এটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ