শিরোনাম
সোহেল অটল
প্রকাশ: ২১:১১, ৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৩৪, ৮ মে ২০২৫
রাতে দাপ্তরিক কাজ শেষে দলীয় নেতাদের সঙ্গে কিছু জরুরী আলাপ সারতে হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধ্যুষিত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর যে জঙ্গি হামলা হয়, তার প্রেক্ষিতে ভারত খুব উচ্চবাচ্য করছে। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই সিন্ধু চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। আকাশ বন্ধ করেছে। বাধ্য হয়ে পাকিস্তানকেও একই রকমের কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
শেহবাজ শরীফ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা ছাড়লেন। বিছানার পাশে খুলে রাখা হাতঘড়ি নিয়ে দেখলেন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট।
বাইরে আসতেই অফিসার দাঁড়িয়ে সালাম ঠুকলেন।
“কী হয়েছে? এই সকালবেলা ডাকাডাকি করছো কেন?” কফির কাপ হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলেন শেহবাজ শরীফ।
‘স্যরি স্যার! মি. মোদি ফোন দিয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘুম ভাঙানোর অপরাধ অফিসারের চোখেমুখে।
কফির কাপ হাতে নিয়ে বসতে যাচ্ছিলেন শেহবাজ শরীফ। না বসে তাকিয়ে থাকলেন অফিসারের দিকে।
‘মি. নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’ আবারো বললেন অফিসার।
‘বলো কী? কখন ফোন দিয়েছেন উনি?’ জানতে চাইলেন শেহবাজ।
‘স্যার সকাল আটটায় দিয়েছেন একবার। সাড়ে আটটায় আরেকবার।’ বললেন অফিসার।
‘হায় হায়! বলো কী! চলো।’ স্লিপিং গাউন পরেই অফিসে রওনা দিতে উদ্যত হলেন শেহবাজ শরীফ।
‘স্যার এখন যেতে হবে না।’ প্রধানমন্ত্রীকে থামালেন অফিসার। ‘মি. মোদির সেক্রেটারি ফোন দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। আমরা বলেছি আপনার সঙ্গে কথা বলে সময় জানানো হবে।’
এতোক্ষণ কফির কাপ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন শেহবাজ শরীফ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এবার বসলেন। কফিতে একটা চুমুক দিলেন। তারপর বললেন, ‘মুনিরকে খবর দাও। বলো জরুরী।’
মুনির হলেন জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান।
দুই.
পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার অফিস। সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বসে আছেন। সামনে সেনাপতি আসিম মুনির। পাশে মূখ্যসচীব আসাদ রেহমান জিলানী।
জিলানীর হাতে ডায়েরি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, তা নোট করছেন। আসিম মুনির সিনা টানটান করে বসে আছেন। মাঝেমধ্যে আলোচনায় নিজের মতামত জানাচ্ছেন।
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মি. মোদির ফোন দেয়ার কথা। সিন্ধু চুক্তি, করাচী বন্দর, আকাশ সীমা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নোট করলেন মি. জিলানী। শেষে আসিম মুনির বললেন, বেলুচিস্তানে যে তালেবান হামলা হচ্ছে, এ বিষয়টা তুলবেন নাকি স্যার?শেহবাজ শরীফ জিলানীর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘এর সঙ্গে ভারতের কী সম্পর্ক?’
‘ভারতীয় গোয়েন্দারা ওদেরকে ইন্টেলিজেন্স দিয়ে হেল্প করছে স্যার।’ বললেন আসিম মুনির। ‘আপনাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ আছে?’ আবারো জানতে চাইলেন শেহবাজ শরীফ।
সিনাটা আগের চেয়েও বেশি টানটান করলেন আসিম মুনির। বললেন, ‘নাই, তবে আমরা নিশ্চিত স্যার। তালেবানের হাতে এতো তথ্য কোত্থেকে আসবে?’
প্রধান সেনাপতির মুখে এমন অনুমাননির্ভর কথা শুনে খানিক বিরক্ত হলেন শেহবাজ শরীফ। তবে সেটা প্রকাশ করলেন না। মুখ্যসচিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, বিষয়টা নোট করো।
দুপুর ২টা ১০ মিনিট। নোট করা সব শেষ। হাতে এখনো সময় আছে ২০ মিনিট।
শেহবাজ শরীফের ক্ষুধা পেয়েছে। সময়মত না খেলে অসুস্থবোধ করেন তিনি। ডায়াবেটিসের সমস্যাও আছে তার। কিন্তু ২০ মিনিটে তার খাওয়া শেষ হবে না। অগত্যা আজকের জন্য লাঞ্চ টাইম পিছিয়ে দিলেন।
তিন.
‘হ্যালো শেহবাজ, আমি নরেন্দ্র মোদি বলছি।’
বেশ খোশমেজাজে কথা শুরু করলেন মি. মোদি।
‘কেমন আছেন আপনি? শরীর ভালো?’ শেহবাজও ভদ্রভাবেই শুরু করলেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে একে অন্যকে বিরাট শত্রু মনে করেন, ফোনালাপের শুরুতে তা বোঝা গেল না।
‘শরীর ভালো। কিন্তু একটু চিন্তিত আছি।’ বললেন মি. মোদি।
‘তা তো থাকবেনই। কাশ্মিরের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটা তো চিন্তার বিষয়ই।’ খোঁচা মারতে ভুল করলেন না শেহবাজ শরীফ।
এই খোঁচা মোটেই গায়ে মাখলেন না নরেন্দ্র মোদি।
‘আরে ধুর, আপনাদের বেলুচের যে অবস্থা, তাতে কিছু পর্যটক মারা যাওয়াতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। বেলুচে তো প্রতি মাসে খুন-খারাবি হচ্ছে। সেনারা মারা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ মরছে।’
গুগলির বিপরীতে ছক্কা হাঁকাতে চেষ্টা করলেন মি. মোদি। শেহবাজ শরীফ খানিকটা হোঁচট খেলেন। তবে তিনিও কম যান না। বললেন, ‘বুঝতে পেরেছি, রাহুল গান্ধী আপনাকে পেরেশানে রেখেছেন। ছেলেটা বেশ ম্যাচিউর হয়ে গেছে। আপনার রাজনীতি বোঝা শুরু করেছে। বেশ চোখে চোখ রেখে খেলছে।’
‘রাহুলের কথা বলছেন? ও তো এখনো বাচ্চালোগ। গার্লফ্রেন্ড আর হুইস্কি নিয়েই দিন কাটে তার। তাকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’
মুখে বললেন ‘বিচলিত হওয়ার কিছু নেই’, তবে রাহুলের ভাবসাব ভালো ঠেকছে না নরেন্দ্র মোদির। রাহুলকে এখন পরিণত রাজনীতিবিদ মনে হচ্ছে। কাশ্মির ইস্যু নিয়ে যে কোনো সময় রাহুল ঝাপিয়ে পড়বে। জনমত নিজের পক্ষে নিয়ে যাবে। মূলত সে কারণেই আজকের ফোনালাপ।
‘তাহলে কি ওয়াকফ বিল নিয়ে চিন্তিত আপনি? ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে কিন্তু গাদ্দারি হয়ে যাচ্ছে।’ বললেন শেহবাজ শরীফ।
এ প্রসঙ্গে গেলেনই না মি. মোদী।
‘শোনেন’ ধীরস্থির গলায় শুরু করেন মি. মোদি, ‘আমার কথা বাদ দিন। বয়স হয়েছে। কদিন পরেই রাজনীতি থেকে রিটায়ার করব। তাছাড়া দীর্ঘদিন তো দেশ চালালাম। আর কত?’
একটু থামলেন মি. মোদি। শেহবাজের মনের ভাব বুঝতে চাইলেন ফোনের ওপাশ থেকে। শেহবাজ শরীফও কোনো কথা না বলে মন দিয়ে শুনতে লাগলেন। মোদিকে তিনি ভালো করেই চেনেন। কঠিন মস্তিষ্কের মানুষ। কথার মায়াজালে জড়াতে ওস্তাদ।
‘ইমরান খানের কী খবর?’ হঠাৎ মি. মোদি জানতে চাইলেন।
কিছুটা বিষন্ন গলায় উত্তর দিলেন শেহবাজ শরীফ, ‘কারাগারে আছে। দুর্নীতি করে দেশটাকে শেষ করে ফেলেছেন ইমরান খান। পাকিস্তানে তো দুর্নীতি চলে না, আপনি জানেন।’
‘তা তো বটেই’, মৃদু হাসি বয়ে গেল মি. মোদির মুখে। অন্যপাশ থেকে শেহবাজ শরীফ তা টের পেলেন না।
‘ইমরান খান সাহেব ছাড়া পেলে তো আপনাকে আর আস্ত রাখবে না। সম্ভবতে আপনাকে পাকিস্তানেই থাকতে দিবেন না।’ বললেন মি. মোদি।
কথাটা খুব অপমানজনক মনে হল শেহবাজ শরীফের কাছে। পাকিস্তান মুসলিম লীগের মতো প্রাচীন দল ইমরান খানের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়েছে কয়েক বছর ধরে। সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন মি. মোদি।
একটু চড়া গলায় মোদিকে বললেন তিনি, ‘কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?’
মি. মোদি বুঝতে পারলেন শেহবাজ শরীফ উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। এটাই তিনি চাচ্ছিলেন।
তিনি বললেন, ‘চলুন, এমন কিছু করি যাতে আপনাকেও দেশ ছেড়ে পালাতে না হয়। আমারও মুখ রক্ষা হয়।’
শেহবাজ শরীফের উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকলেন মি. মোদি। বেশ কিছুক্ষণ পর শেহবাজ শরীফ উত্তর দিলেন, ‘কী করতে চান?’
মি. মোদি বললেন, ‘আমি একা কিছু করতে চাই না। করলে দুজনকেই করতে হবে।’
শেহবাজ শরীফের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আসিম মুনির। তার কানেও ফোনের একটা রিসিভার। শেহবাজ শরীফ তার দিকে তাকালেন একবার। আসিম মুনির হাতের ইশারায় কথা চালিয়ে যেতে বললেন।
‘একটু ব্যাখ্যা করুন। কী করতে হবে।’ বললেন শেহবাজ শরীফ।
‘চলুন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি।’
শেহবাজ শরীফ কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন ব্যাপারটা বুঝতে। তবে ব্যাপারটা বুঝে ফেললেন। তারও রাজনৈতিক মস্তিষ্ক। মি. মোদি চাচ্ছেন দুই দেশকে একটা পূর্বপরিকল্পিত যুদ্ধে জড়াতে। যেখানে হামলা হবে। পাল্টা হামলা হবে। বিমান উড়বে। গুলিবর্ষন হবে। কিছু সেনা মারা যাবে। কিছু সাধারণ মানুষও মরবে।
তাতে লাভ কী হবে?
মোদির মুখ রক্ষা হবে। জনগণ জানবে ভারত পাকিস্তানকে পেহেলগাম হামলার কড়া জবাব দিয়েছে। জনগণ জানবে মোদির অনেক ক্ষমতা। ভারতের অনেক ক্ষমতা। বিজেপির কাছে তারা নিরাপদ।
অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার যে বর্তমান মূল্যস্ফীতি, বেলুচিস্তান সঙ্কট ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, তাও পাকিস্তানের জনগন ভুলে যাবে। তারা ভারতকে পাল্টা হামলা করবে। পাকিস্তানের জনগণও জানবে- পাকিস্তানের অনেক ক্ষমতা। এই সরকারের কাছে তারা নিরাপদ।
দুজন আরো কিছুক্ষণ কথা হল। শেষে মি. মোদি বললেন, ‘ফোনটা আসিম মুনিরকে দেন। আমার পাশে উপেন্দ্র বসে আছেন। ওরা দুজন একটু কথা বলুক।’
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ভারতের চীফ অব দ্য আর্মি স্টাফ।
এরপর জেনারেল আসিম মুনির এবং জেনারেল উপন্দ্রে দ্বিবেদী বেশ কিছুক্ষণ ফোনালাপ চালিয়ে গেলেন। কবে যুদ্ধ শুরু করা যায়, কোথায় কোথায় বোমা হামলা, ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো যায়- সে বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয় দুজনের।
দুই জেনারেলের আলাপ দীর্ঘায়িত হচ্ছিল। শেষে শেহবাজ শরীফ হাঁক দিলেন, ‘মুনির, লাঞ্চ সার্ভ হয়েছে। আসুন খেয়ে নিই। আমার আবার ডায়াবেটিস। সময়মত না খেলে সমস্যা।’
(এই লেখার প্রতিটি চরিত্র বাস্তব। কিন্তু বর্ণনাকৃত প্রতিটি ঘটনা কাল্পনিক)
-