শিরোনাম
নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:৫০, ১৯ আগস্ট ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
সরাসরি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাসপাতালকে ঘিরে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দালালচক্র এবং ২০টিরও বেশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা, যাদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। তারা কখনো রোগী, কখনো হাসপাতালের কর্মী সেজে রোগীদের বিভ্রান্ত করেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি বলে বসেন— হাসপাতালে টেস্ট ভালো হয় না বা মেশিন নষ্ট— ফলে রোগীদের নিকটবর্তী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন।
জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারই দালালদের অর্থায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব সেন্টারের মালিকরা দালালদের নিয়মিত বেতন দেন অথবা ভাগানো রোগীর সংখ্যার ওপর কমিশন প্রদান করেন। ফলে হাসপাতালের দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন।
অভিযোগ আছে, কোনো কোনো সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি চিকিৎসকদের কক্ষে ঢুকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন। একাধিক রোগী অভিযোগ করেছেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও দালালরা তাদের আটকে রেখে ক্লিনিকে পাঠাতে চাইছে। এমনকি এক নারীর সিজার অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে এলে তাকে বলা হয়— হাসপাতালে এ ধরনের অপারেশন হয় না, বাইরে ক্লিনিকে যেতে হবে।
হাসপাতালের নাইট গার্ড ও কর্মচারীরাও দালালদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার। তারা জানান, দালালদের বারবার হাসপাতাল থেকে বের করে দিলেও তারা আবার ফিরে আসেন। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও দালালরা আগেই সরে পড়ে।
নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, শুধু প্রশাসনের পক্ষে এ চক্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, তবে জনবল সংকটের কারণে কিছু রোগী বাইরে যায়। দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আমরা তৎপর রয়েছি।
এদিকে নাজিরপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, খুব শিগগিরই দালাল চক্র ও অনুমোদনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেকগুলোরই নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন, নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট কিংবা প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান। এর মধ্যে কয়েকটি সেন্টারের পাশে রয়েছে একটি বালিকা বিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা শঙ্কিত, এসব সেন্টারে ব্যবহৃত কাচামাল তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
অভিযোগ, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এসব অবৈধ ব্যবসা এখন রোগী ও সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ানক রূপ নিয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে