ঢাকা, রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
চব্বিশের স্মরণে ২৪ দফা ইশতেহার দেবে এনসিপি
Scroll
রবিবার সীমিতভাবে খুলছে মাইলস্টোন, শুরুতেই হচ্ছে না পাঠদান
Scroll
জনকণ্ঠের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
Scroll
জুলাই ঘোষণাপত্র হল অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প: তথ্য উপদেষ্টা
Scroll
জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত, প্রকাশ ৫ আগস্ট: প্রেস উইং
Scroll
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু রবিবার, হতে পারে লাইভ সম্প্রচার
Scroll
দেশে জুন-জুলাইয়ে নির্যাতনের শিকার ৪৩৮ নারী ও কন্যাশিশু: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
Scroll
গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
Scroll
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত এলেন ৩৯ জন বাংলাদেশি
Scroll
রবিবার নতুন বাংলাদেশের ‘ইশতেহার’ ঘোষণা করবে এনসিপি
Scroll
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
Scroll
মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন
Scroll
কিয়েভে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩১

রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮:৫২, ১৮ জুন ২০২৫

রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

পাহাড়ে গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

বর্ষা এলে রাঙামাটিতে বাড়ে ভয়। পাহাড়ের পাদদেশে যারা থাকেন, তাদের জীবন পড়ে শঙ্কায়। প্রতি বছর ভারী বর্ষণে ঘটছে পাহাড়ধস। মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কেউ আহত হচ্ছেন। ভাঙছে ঘরবাড়ি ও রাস্তা। স্নিগ্ধ বর্ষা এখানে আতঙ্ক হয়ে আসে। টানা বৃষ্টিতে সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।

২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জনের প্রাণ গেছে। এরপর থেকে প্রশাসন কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়। ভারি বর্ষণ হলেই ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বৃষ্টি থামলেই সবাই আবার ফিরে আসে আগের জায়গায়। স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। এই কারণে সমস্যা থেকে যাচ্ছে। বরং ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা আরও বাড়ছে।

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটিতে এখন একশর বেশি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছর বর্ষার আগে এসব এলাকায় সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। ভারি বৃষ্টি হলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়। তারপরও অর্ধ লক্ষ মানুষ এখনো ঝুঁকির মধ্যেই বাস করছে।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে ঢোকার মুখে শিমুলতলী এলাকা। এক যুগ আগে এটি ছিল শুধুই পাহাড়। এখন সেই পাহাড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। বেশিরভাগই রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

২০১৭ সালের পাহাড়ধসে এই এলাকায় বড় ক্ষতি হয়। অর্ধ শতাধিক ঘর ভেঙে পড়ে। ২০ জনের বেশি মানুষ মারা যান। আহত হন শতাধিক।

দুঃখজনকভাবে, আবারও সেই জায়গায় বসতি গড়ে উঠেছে। শুধু শিমুলতলী নয়—ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, মোনঘর, সনাতন পাড়ার অবস্থাও একই। পাহাড়ধসের পরও থেমে থাকেনি ঘর বানানো।

শিমুলতলীর বাসিন্দা খোরশেদ আলী বলেন, “এভাবে না থাকলে উপায় নেই। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও থাকছি। যদি সরকার কোথাও পুনর্বাসন করে, তাহলে আমরা চলে যাবো।”

রূপনগরের খোকন ও হামিদা আগে একবার পাহাড়ধসে ঘর হারিয়েছেন। তবুও আবার সেই জায়গায় নতুন ঘর বানিয়ে থাকছেন। তাদের কথায়, “যাওয়ার মতো জায়গা নেই। সরকার জায়গা দিলে আমরা যাবো। কিন্তু শুধু বললে তো হবে না। কোথায় যাব, কিভাবে থাকব—এই উত্তর কেউ দেয় না। তাই বলি—বাঁচলে এখানেই বাঁচব, মরলে এখানেই মরব।”

যুব উন্নয়ন ও মনতলা আদাম এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র লাল চাকমা ও সোনা চন্দ্র চাকমা বলেন, “বর্ষায় প্রশাসন শুধু এলাকা চিহ্নিত করে দিয়ে যায়। কিন্তু পাহাড় নিরাপদ করার কোনও কাজ চোখে পড়ে না।”

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, “২০১৭ সালে এত বড় দুর্ঘটনার পর প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। তারা কারণ ও করণীয় চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু আমরা সেই রিপোর্ট আজও দেখিনি। আমরা বিশ্বাস করি, সেই সুপারিশ অনুসরণ করা হয়নি। তা না হলে কেউ আবারও সেই জায়গায় ঘর তুলত না। সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকতে হতো না। এই সমস্যা ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। আমরা দেখছি, ২০১৭ সালের পর ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কমেনি—বরং বেড়েছে।”

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষার পূর্বাভাস থাকলে আমরা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাই। তবে ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে পুনর্বাসন এখানে জটিল। তবুও ঝুঁকি কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর ২০১৮ সালের জুনে নানিয়ারচরে ফের পাহাড়ধসে মারা যায় ১১ জন। ২০১৯ সালের জুনে কাপ্তাইয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।

 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন