শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৩৫, ২৯ মে ২০২৫
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, এই জনসভার জন্য সীমান্তবর্তী জেলা আলিপুরদুয়ারকে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশে। সভাস্থলটি বাংলাদেশের সীমান্তের খুব কাছাকাছি এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হাসিমারা বিমানঘাঁটির পাশেই অবস্থিত—যেখান থেকে সম্প্রতি পাকিস্তানবিরোধী বিমান অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের প্রতি একপ্রকার সামরিক ও রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার কৌশলই ছিল মোদির সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসের বেইজিং সফরের পর থেকে দিল্লির অস্বস্তি বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে সীমান্তে মোদির উপস্থিতি এক প্রকার “পাওয়ার প্রজেকশন” বলেই ব্যাখ্যা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়া আলিপুরদুয়ার ভারতের ‘চিকেন নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর-এর অংশ, যা দেশের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। ভৌগোলিকভাবে এটি ভারতের অন্যতম দুর্বল পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। তাই এই অঞ্চলে মোদির সরাসরি উপস্থিতি দিল্লির দৃষ্টিতে ‘রক্ষণাত্মক কৌশলের’ অংশ।
সভায় মোদি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাধা এবং “অপারেশন সিঁদুর” নিয়ে সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সংগঠন ঢেলে সাজানোর কথাও জানান।
তবে ভাষণের অন্তর্বর্তী বার্তা ছিল স্পষ্ট—বাংলাদেশের প্রতি একটি কড়া সতর্কবার্তা। মোদি বলেন, বিজেপি ২০১৯ সালের পর পশ্চিমবঙ্গে বড় জয় না পেলেও, এবার উত্তরবঙ্গকেই শক্ত ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করবে। কারণ এই অঞ্চল থেকেই তাঁরা মমতা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চান এবং কৌশলগত কারণে এখানেই নজর রাখছে দিল্লি।
মোদি সভার আগে ১ হাজার ১০ কোটি রুপির একটি গ্যাস প্রকল্প উদ্বোধন করেন, যা আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের আড়াই লাখ পরিবারের ঘরে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেবে। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্পের ঘোষণাও ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল—দূরবর্তী জেলা বেছে নিয়ে ‘উন্নয়নের বার্তা’ ও ‘সীমান্ত কৌশল’—দুই-ই একসাথে দেওয়া।
সব মিলিয়ে মোদির এই সফরকে কেবল রাজ্য রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, এটি বাংলাদেশ ও চীন ঘিরে ভারতের কৌশলগত বার্তা বলেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ