শিরোনাম
রিপন ইসলাম শেখ, নীলফামারী
প্রকাশ: ১৬:২২, ২৮ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৬:২৭, ২৮ মে ২০২৫
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্য বেহাত হতে বসেছে । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
দেশের উত্তরাঞ্চল খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় ১৯৩৭ সালে তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৩ সালে মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করে পাকিস্তান সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারাজসহ সেচযোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো নির্মাণ শুরু হয় ও নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯০ সালে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হিসেবে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প আত্মপ্রকাশ করে। সেচ প্রকল্পের জন্য ৫২টি জলকপাট তৈরি করা হয়, যার ৪৪টি মূল নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় চাষাবাদের জন্য পানি সরবরাহের প্রধান মাধ্যম ছিল এই তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প।
কিন্তু যে মহান লক্ষ্য সামনে রেখে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছিল, তা এখন বেহাত হতে বসেছে। শুরুতে ৪০ হাজার কৃষক সেচ সুবিধা পেলেও তা হ্রাস পেয়ে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। গ্রাহক হ্রাস পাওয়ার পেছনে রয়েছে পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৎ আচরণ, গ্রাহক হয়রানি ও টেন্ডার বাণিজ্য। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বছরের পর বছর সেচ ক্যানেল ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক ক্যানেল ব্যক্তি দখলে থাকলেও উদ্ধারে নেই কোনো পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ। গ্রাহক পর্যায়ে সঠিক সমাধান না পেয়ে সেচ এরিয়া ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর নলকূপ।
সেচের করুণ হাল ও রাজস্বে ধস: দেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুর ও নীলফামারী জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর আবাদী-অনাবাদি জমিতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ১৯৩৭ সালে এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও ১৯৯০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তবে ১৯৯৩ সালে প্রথম সেচ প্রকল্প চালু করেন বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডালিয়া। ৬ শত ১৫ দশমিক ২৪ মিটার ব্যারাজ নির্মাণ করে মোট ছয় লাখ কিউসেক পানি খরিপ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে সেচের জন্য তিনটি জেলার (নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর) ১২টি উপজেলায় জালের মতো ছড়িয়ে আছে প্রকল্পের খাল বা ক্যানেল।
প্রথম দিকে ব্যারাজ ও সেচ ক্যানেলে পানির সংকট না থাকলেও পরবর্তীতে ভারত সরকার এক তরফা ভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করলে মূল নদীতে পানি কমে যায়। অপর দিকে ধীরে ধীরে মূল ক্যানেল, শাখা ও উপশাখা ক্যানেলগুলোতে পানি ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে। সঠিক সময়ে কৃষক পানির চাহিদা মেটাতে না পারলে, চাষাবাদ ধরে রাখতে বেশি ব্যয়ে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন এবং পরবর্তীতে বিদ্যুৎ এ চালিত মোটর ব্যবহার করে পানি দিতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক।
সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, প্রথম ধাপের ১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকলে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মাত্র ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য পানি সরবরাহ করবে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছর ৭৯ হাজার হেক্টর সেচ প্রকল্পের বাহিরে রয়েছে। তবে একটি জরিপকারী সংস্থার তথ্য মতে জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সম্প্রসারণ বিভাগ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া কথা বললেও তা ২৫-৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হবে। যে কমান্ডি এলাকা রয়েছে তার বেশির ভাগ সেচ নিষ্কাষণ খাল অবকাঠামোর সংস্কার কাজ চলছে।
পাউবো অফিসের তথ্য মতে ৫৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষাবাদ হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) আমলেশ চন্দ্র রায় জানান, সেচ প্রকল্প থেকে আয় হয় না। তবে সার্ভিস চার্জ আসে। প্রতি একর জমিতে সেচের জন্য ৪০০ টাকা ধরা হলেও সেভাবে আসে না। সেচ প্রকল্পে পুরোটাই ভর্তুকী মূল্য হিসেবে চলছে। তার মতে, সার্ভিস চার্জ যেটা, তা না বলাই ভালো হবে। তবে যে হারে টাকা ধরা আছে, সম্পূর্ণ টাকা আদায় হলে সেচ খাতে একটা বিপ্লব আসতো।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ