শিরোনাম
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ২১:৩৪, ৩০ মে ২০২৫
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে উঠে আসে একাধিক মাত্রা: ক্ষমতা, পরিচিতি, আদর্শ, প্রভাব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, কিংবা কখনও আত্মরক্ষার কৌশল। শোবিজ তারকারা যে পরিমাণ জনসমর্থন ও ভক্ত-অনুরাগী তৈরি করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তা ভোটে পরিণত করতে চায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারকাদের ব্যবহার করা হয় নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে, মিছিল-মিটিংয়ে মুখচেনা আকর্ষণ হিসেবে।
ভারতে যেমন দেখা গেছে হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিনহা, কঙ্গনা রানাওয়াত, কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহানদের সংসদে প্রবেশ; তেমনি বাংলাদেশেও আছেন রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিব খান, মমতাজ, তারানা হালিম, সুবর্ণা মুস্তফাদের মতো তারকা যারা বিভিন্ন সময় সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
শিল্পীরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া খোঁজেন নিরাপত্তার জন্যও। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে শিল্পীদের একটা বড় অংশ মনে করে—রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া রাষ্ট্রীয় ফান্ড, পুরস্কার, অথবা বড় বাজেটের কাজ পাওয়া কঠিন। ফলে শিল্পজীবনকে টিকিয়ে রাখতে কিংবা ‘বাইরের হুমকি’ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অনেকেই রাজনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলেন। বিশেষ করে যারা টিভি বা সিনেমার প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য সরকারঘনিষ্ঠতা কোনো কোনো সময় বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
অনেকে বলেন, কিছু শিল্পী সত্যিকারের সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, রাজনীতি তাদের কাছে সমাজসেবার এক্সটেনশন। তবে বাস্তবতা বলছে, সেই সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘রাজনীতি’ তাদের জন্য ইমেজ গঠনের হাতিয়ার বা ক্যারিয়ার বাড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় আবার কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার কাছাকাছি থাকার কারণে তারা দলীয় পরিচয়ের বাইরে যেতে পারেন না—এটাও একধরনের ‘নীরব রাজনীতি’।
অভিনয়জীবন দীর্ঘ নয়, গান বা সিনেমায় জনপ্রিয়তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেও বয়স বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজ কমে যায়। সেই পরিস্থিতিতে তারকারা অনেক সময় রাজনীতিকে ভবিষ্যতের ‘পেনশন প্ল্যান’ হিসেবে বেছে নেন।
সরকারি সুবিধা, ভাতা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ—এগুলো তাদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক দলগুলোও শোবিজ তারকাদের নিজেদের ইমেজ রিফ্রেশ করতে ব্যবহার করে। বিশেষ করে তরুণ ভোটার টার্গেট করতে তারা জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সামনে আনে। আর শিল্পীরাও জানেন, এই বিনিময়টা ‘উইন-উইন’।
তবে বিতর্কও আছে। রাজনীতির জগতে প্রবেশের পর অনেক তারকাই হারিয়ে যান। একসময় রাজনীতির জন্য শিল্প বিসর্জন দিতে হয়, আবার অনেকে রাজনীতিতেও টিকতে পারেন না।
২০২৫ সালে সরকার পতনের পর বাংলাদেশে কিছু তারকা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে হেনস্তা বা মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ, ফেরদৌস, বাঁধন, মমতাজসহ অনেকে বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন। ফলে প্রশ্ন জাগে—রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কি সব সময়ই লাভজনক হয়?
রাজনীতি আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন হতে পারে সমাজ বদলের হাতিয়ার, তবে সেটা হতে হবে স্বচ্ছতা ও নীতিনিষ্ঠতার ভিত্তিতে, ব্যবহারের নয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ