শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:০৩, ২৯ মে ২০২৫
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক কয়েকদিন আগে ট্রাম্প এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘৬০ মিনিটস’-এ হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার টেক্সাসের ভোক্তা সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এতে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে—ফলে ট্রাম্প ব্যক্তি ও রাজনৈতিকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পরে ফেব্রুয়ারিতে মামলাটির ক্ষতিপূরণ দাবি ১০ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার করা হয়।
ট্রাম্পের আইনি দল ২৮ মে মার্কিন টেক্সাসের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা আদালতে প্যারামাউন্টের মামলাটি খারিজের আবেদনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আপত্তি দাখিল করে। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, হ্যারিসের সাক্ষাৎকারের যে সম্পাদিত অংশ সম্প্রচারিত হয়েছিল, তা মূলত ‘কমার্শিয়াল স্পিচ’ অর্থাৎ বাণিজ্যিক ভাষ্য—যা প্রথম সংশোধনী (ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট)-এর সুরক্ষার আওতায় পড়ে না।
আইনজীবীরা বলেন, ‘সিবিএস এর সংবাদ বিকৃতি বা ‘নিউজ ডিস্টরশন’ কোনোভাবেই সম্পাদকীয় স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তারা বলেছে, যেহেতু সিবিএস এর আয় বিজ্ঞাপন থেকে আসে এবং তারা ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালের মতো মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগী, তাই এটি একটি বাণিজ্যিক প্রচার হিসেবে দেখা উচিত।”
তাদের বক্তব্য, "সংবাদমাধ্যম হওয়া মানেই নয় যে তারা ভুল ও বিভ্রান্তিকর কিছু প্রচার করে দায়মুক্ত থাকবে। ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট সংবাদের বিকৃত উপস্থাপনাকে রক্ষা করে না।"
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার, যেখানে সাংবাদিক বিল হুইটাকার তাকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন। ‘ফেস দ্য নেশন’-এ হ্যারিসের উত্তরের একটি দীর্ঘ অংশ সম্প্রচারিত হলেও, ‘৬০ মিনিটস’-এ তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়। ট্রাম্পের অভিযোগ, এই সংক্ষেপণই জনমনে বিভ্রান্তি ও ‘মানসিক যন্ত্রণা’র সৃষ্টি করেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার নিষ্পত্তির জন্য প্যারামাউন্ট ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের দল। তারা আরও বেশি অর্থের পাশাপাশি ‘৬০ মিনিটস’-এর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। এমনকি সিবিএসের বিরুদ্ধে আরেকটি নতুন মামলার হুমকিও দিয়েছে ট্রাম্পপক্ষ।
এই আইনি লড়াইয়ের পটভূমিতে রয়েছে প্যারামাউন্ট গ্লোবালের ৮ বিলিয়ন ডলারের স্কাইড্যান্স মিডিয়ার সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা, যা বর্তমানে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (FCC) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তিনজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর শারি রেডস্টোনকে সতর্ক করে বলেছেন, যদি ট্রাম্পকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তবে তা একটি বেআইনি ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদিও আইনি বিশেষজ্ঞরা এটিকে বাস্তবসম্মত ঝুঁকি বলে মনে করছেন না।
এফসিসি-এর ট্রাম্প-নিযুক্ত চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কার বলেছেন, সিবিএস এর বিরুদ্ধে “নিউজ ডিস্টরশন” সংক্রান্ত অভিযোগ এফসিসি এর পর্যালোচনার সময় বিবেচনায় আসতে পারে, তবে সেটি প্যারামাউন্ট-স্কাইড্যান্স চুক্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
সিবিসি নিউজ ইতোমধ্যে বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের সম্পূর্ণ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেছে এবং দাবি করেছে, ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত ছিল না।
এর আগে ট্রাম্প ২০২৩ সালে এবিসি নিউজ ও সাংবাদিক জর্জ স্টেফানোপোলাসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। সেসময় স্টেফানোপোলাস এক অনুষ্ঠানে ভুলভাবে বলেছিলেন, ট্রাম্প ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন—যদিও আদালত তাকে ধর্ষণে নয়, যৌন নিপীড়ন ও মানহানিতে দায়ী করে। পরে ডিসেম্বরে ডিজনি ও এবিসি ট্রাম্পকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ ও অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন ডলার আইনি খরচ মিটিয়ে মামলা মিমাংসা করে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ