শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৪৪, ১৯ মে ২০২৫
ভারত ও পাকিস্তান যখন যুদ্ধের একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল, তখন দুই দেশের সরকারই ঘোষণা করে ‘নৈতিবাচ্য ও সামরিক বিজয়’। যদিও বাস্তবে কী ঘটেছে, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে নানা প্রশ্ন। ভারতে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে দেশটির মূলধারার গণমাধ্যম। সেনসেশন, জাতীয়তাবাদ আর ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় অভিযুক্ত হয়েছে অনেক নামি টিভি চ্যানেল। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে কারাভান ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক হরত সিং বল এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় গণমাধ্যমের চিত্র তুলে ধরেন দ্যা লিসেনিং পোস্ট-কে।
সাক্ষাৎকারে হরত সিং বল বলেন, “যুদ্ধের মুহূর্তে ভারতীয়রা যখন টিভির সামনে বসে প্রকৃত তথ্য জানতে চাচ্ছিল, তখন তারা পেয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য, মিথ্যা আর একধরনের ‘যুদ্ধ-উল্লাস’। এটি ছিল একটি পারফর্মেন্স, খবর নয়।” তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ সময়ে ভারতীয় জনগণ গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্বকে অনেক সময় উপহাস করে এড়িয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধের মুহূর্তে ভুল তথ্য পরিবেশন করাকে জনগণ মেনে নিতে পারেনি। এ থেকেই জন্ম নেয় গণবিক্ষোভ ও ক্ষোভ।
হরত সিং বল বলেন, ‘গত এক দশক ধরে যেভাবে সরকার গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে, তারই ফল এই যুদ্ধ পরিস্থিতির কাভারেজ। গণমাধ্যম এত বেশি ‘জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা’ ছড়িয়েছে যে, সরকার নিজেই এক কৌশলগত জালে আটকে পড়েছে।’ এমনকি এক পর্যায়ে এমনও মনে হয়েছে যে, গণমাধ্যমই সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকার এটি বোঝে না বা বুঝেও তোয়াক্কা করে না। বরং বিজেপি প্রকাশ্যে এসব চ্যানেলকে সমর্থন জানায়।
ভারতের বিকল্প বা স্বাধীন অনলাইন গণমাধ্যমগুলো মূলধারার চ্যানেলগুলোর মিথ্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, তাদের ওপর নেমে আসে নানা ধরনের চাপ। উদাহরণস্বরূপ, দ্য ওয়ার এর একটি রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানে ভারতের প্রথম বিমান হামলায় ভারতেরই কিছু ক্ষতি হয়েছিল। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সাইটটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরে প্রতিবেদনটি মুছে ফেলার পর ফের চালু করা হয়।
এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ‘বিমান ক্ষয়ক্ষতি’ বা যুদ্ধে ভারতের ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বড় অপরাধ— গণমাধ্যমের জন্য এটি এখন স্পষ্ট ‘রেড লাইন’।
উত্তেজনার মধ্যে অনেক চ্যানেল দাবি করে যে, ভারতীয় নৌবাহিনী করাচি বন্দরে হামলা চালিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ছবি। কিন্তু পরে ফ্যাক্ট-চেকাররা প্রমাণ করেন, ছবিগুলো গাজার, করাচির নয়। তবে এসব ভুল তথ্য প্রকাশের দায়ে কোনো মূলধারার টিভি চ্যানেলকে জবাবদিহি করতে হয়নি।
হরত সিং বল বলেন, ‘একটি প্রধান পত্রিকায় লেখা হয়, ভারত এখন ‘দুই-দেড় ফ্রন্টে যুদ্ধ’ করছে— পাকিস্তান, চীন এবং নিজেদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যারা প্রশ্ন তোলে, সত্য জানতে চায়। এই শ্রেণিটিকেও এখন রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
ভারতের মিডিয়া কাঠামোর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের গণমাধ্যম পুরোপুরি সরকারের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। ভুয়া খবর ও গুজব এবার এসেছে সরকারি ব্রিফিং থেকেই। বিকল্প বা স্বাধীন সংবাদমাধ্যমে তেমন প্রশ্নই তোলা হয়নি।
এই পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে হরত সিং বল বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবো, কিন্তু পরিবর্তনের আশা নেই। এই মিডিয়া কাঠামো এখন প্রোপাগান্ডার অংশ হয়ে গেছে। এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।’
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ