ঢাকা, রোববার, ০১ জুন ২০২৫

১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ট্রাম্পের ফোনেই বদলে গেল পরিস্থিতি! যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩:২৮, ১৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৩৫, ১৯ মে ২০২৫

ট্রাম্পের ফোনেই বদলে গেল পরিস্থিতি! যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত পুতিন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফোনালাপের আগে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের ‘রক্তপাত’ থামানোই এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স নিশ্চিত করেছে, সোমবার রাতে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ শুরু হয়। এ সময় পুতিন ছিলেন রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় উপকূলবর্তী সোচি শহরে, আর ট্রাম্প ছিলেন ওয়াশিংটনে। 

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আজ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একটি ‘ফলপ্রসূ’ ফোনালাপ হয়েছে। পুতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘পুতিন নমনীয় হয়েছেন।’

সংবাদমাধ্যম টাস জানায়, “পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আগে এমন কিছু ‘সমঝোতা’ হতে হবে যা উভয় পক্ষের জন্যই গ্রহণযোগ্য হবে।” তিনি আরও জানান, ইউক্রেন সংকটের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানে’ তিনি আগ্রহী এবং ভবিষ্যত শান্তি আলোচনা নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

এছাড়া আইএফএক্স সূত্রে জানা গেছে, ‘পুতিন এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর করার পথ খুঁজছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পকে।’

ফোনালাপ শেষে পুতিন বলেন, এই আলোচনা ছিল ‘গঠনমূলক, খোলামেলা এবং অত্যন্ত উপকারী’। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ নবস্তিকে দেওয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, তিনি যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তুত, তবে এর জন্য ‘সবচেয়ে কার্যকর শান্তির পথ’ খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি আরও জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে এমন একটি স্মারক চুক্তি তৈরিতে কাজ করতে আগ্রহী, যেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে, এই চুক্তি হতে হবে এমনভাবে, যাতে তা ‘সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য’ হয়।

এই দীর্ঘ আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলার কথা রয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি নেটো নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কয়েক মিনিটের একটি ফোনালাপ করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানান, ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এবং রাশিয়া আলোচনায় রাজি না হলে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো একপর্যায়ে সরে আসবে।

ইতালি সফরে যাওয়ার পথে ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, একটা অচলাবস্থা চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুতিনকে জিজ্ঞেস করবেন, তিনি সত্যিই শান্তি চান কি না?’

জেডি ভ্যান্স আরও বলেন, ‘তিনি জানেন না কীভাবে এ যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসবেন। ট্রাম্প প্রস্তুত, কিন্তু যদি রাশিয়া না চায়, তাহলে আমাদের বলতে হবে—এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। আমরা চেষ্টা করব, কিন্তু যদি সফল না হই, তাহলে থেমে যাব।’

এদিকে, সম্প্রতি ট্রাম্পের চাপের মুখে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুলে মুখোমুখি বৈঠকে বসেছেন। এই বৈঠকে পুতিন সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিলে ইউরোপীয় দেশগুলো ও ইউক্রেন কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়।

তবে পুতিন এখনো যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু এলাকায় আরও অগ্রসর হয়েছে।

গতকাল রোববার রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা দাবি করেন, রাশিয়া একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল, যদিও তা নিশ্চিত করেনি মস্কো।

ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে রোববার একটি পোস্ট দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘আগামীকাল (আজ সোমবার) ট্রাম্প প্রস্তাবিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেই বোঝা যাবে, পুতিন শান্তি চান।’

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, যদি রাশিয়া শান্তি আলোচনায় গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আরও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে মস্কো। ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটোর বিভিন্ন সদস্য দেশের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানানো হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। এবার ট্রাম্প সরাসরি হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষের অবস্থান এখনো অনেক দূরে। শান্তি নাকি আরও যুদ্ধ—তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক সপ্তাহের কূটনৈতিক অগ্রগতির ওপর।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন