শিরোনাম
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৩৫, ১৩ জুন ২০২৫
এরপর স্থানীয় পুলিশ ছবির সূত্র ধরে ময়মনসিংহের মশাখালী ইউনিয়নের একটি মাজার থেকে সমু চৌধুরীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। গভীর রাতে মাজারে পৌঁছান তাঁর চাচাতো ভাই রাইসুল ইসলাম এবং অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য সুজাত শিমুল ও জুলফিকার চঞ্চল। তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ সমু চৌধুরীকে পরিবারের জিম্মায় দেয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে এ খবর নিশ্চিত করেন রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমু ভাই এখন যশোর সদরের নতুনবাজারের বাসায়, মায়ের কাছেই বিশ্রামে আছেন।’
রাইসুল জানান, ‘ভাইয়া মাজারভক্ত। কাজ না থাকলে প্রায় সময়ই মাজারে চলে যান। ঈদের ছুটি যশোরে কাটিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরেছিলেন। এরপর এক পরিচিতজনের সঙ্গে এক কাপড়ে গফরগাঁওয়ের একটি মাজারে যান। সেখানে কাপড় ময়লা হয়ে যাওয়ায় তা ধুয়ে দিয়ে গামছা পরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন কেউ ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়। এরপরই অনেকে গুজব ছড়াতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় ভাইয়া মানসিকভাবে কিছুটা ট্রমায় পড়ে গিয়েছিলেন, তবে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমাদের দেখে পুলিশের সামনেই বলল, "আমার তিন ভাই চলে আসছে, এখন আর কোনো সমস্যা নাই।"’
রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইয়া সব সময়ই সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। যশোরে কখনো সেলিব্রিটির ভাব নিয়ে চলাফেরা করেননি। সাধারণ মানুষের মতোই থাকেন।’
সমু চৌধুরীর অভিনয়জীবনের শুরু উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গে। যশোরে ছাত্রজীবনে পথনাটক, গণসংগীত ও মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন। পরে ঢাকা থিয়েটার, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় এবং উদীচী ঢাকা শাখার সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৯০ সালে আতিকুল হক চৌধুরীর পরিচালনায় ‘সমৃদ্ধ অসীম’ নাটকে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। এরপর ‘জন্মভূমি’, ‘এই সময়ের গল্প’, ‘দূরের আকাশ’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জায়গা করে নেন দর্শকের মনে।
চলচ্চিত্রেও তার যাত্রা শুরু হয় আমজাদ হোসেনের ‘আদরের সন্তান’ (১৯৯৫) ছবির মাধ্যমে। এরপর ‘শত জনমের প্রেম’, ‘দোলন চাঁপা’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘যাবি কই’সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ওটিটি মাধ্যমেও নিয়মিত অভিনয় করছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি সমু চৌধুরী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন, কিন্তু তাঁর ভাই ও বোন দুইজনই প্রয়াত। বাবাও মারা গেছেন। এখন একমাত্র মা জয়নব চৌধুরী বেঁচে আছেন। ভাইরাল ছবির পর অনেকেই সমু চৌধুরীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবার।
রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘মাজারে গামছা পরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন— এতটুকুই ঘটনা। কিন্তু কিছু পক্ষ এটাকে নিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এটা একদমই অনুচিত। ভাইয়া সুস্থ আছেন— এটা সবাইকে জানাতে চাই।’
সমু চৌধুরীর মতো মাটি ঘেঁষা সংস্কৃতি-কর্মীরা আমাদের সমাজে সাদামাটার সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছুর আগে-পিছে না জেনে ছবি ছড়ানো ও মন্তব্য করার আগে আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।
এমআরএইচ