ঢাকা, রোববার, ০১ জুন ২০২৫

১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

রোববার বাজারে আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:২৩, ২৯ মে ২০২৫

রোববার বাজারে আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট

আগামী রোববার, ১ জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর সই করা নতুন নকশা ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে। নতুন নোটগুলো প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরে অন্যান্য শাখা অফিস থেকে ইস্যু করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নতুন এই নোটগুলো ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য” থিমে ডিজাইন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সিরিজে সব মূল্যমানের নোট পর্যায়ক্রমে ইস্যু করা হবে। নতুন ১০০০ টাকার নোটে থাকছে ১৩টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য। জলছাপ, রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা সুতা, ইউবি-ডিটেক্টেবল প্রিন্টসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। নোটটি নাড়ালে রঙ পরিবর্তন হয় এবং নিরাপত্তা বার উঠে আসে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের সব মূল্যমানের (১০০০, ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ২০, ১০, ৫ ও ২ টাকা) নতুন নোট মুদ্রণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সই করা নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোট ১ জুন প্রথমবারের মতো বাজারে দেওয়া হবে। বর্ণিত নোটসমূহ ওই তারিখে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকে ইস্যু করা হবে।

এসব মূল্যমানের নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সব কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রাও যথারীতি চালু থাকবে। এছাড়া, মুদ্রা সংগ্রাহকদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে নিয়মিত নোটের পাশাপাশি ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান নমুনা নোট (যা বিনিময়যোগ্য নয়) মুদ্রণ করা হয়েছে; যা টাকা জাদুঘর, মিরপুর হতে নির্ধারিত মূল্যে সংগ্রহ করা যাবে।

‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

১০০০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটের ডিজাইন:

১০০০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ মি.মি.×৭০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘১০০০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে বেগুনি রঙের আধিক্য রয়েছে।

নোটের সম্মুখভাগে বামপাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সাভার এর ছবি ও মাঝখানে ‘প্রতিশ্রুত বাক্য’ ও মূল্যমান (এক হাজার টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা’র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের উপরে বামদিকে নোটের মূল্যমান ‘১০০০’, ডানকোণে ‘১০০০’ ও নিচে ডানকোণে ‘৳১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছনভাগের ডিজাইন হিসেবে জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা এর ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের উপরে বামকোণে মূল্যমান ‘১০০০’ ও ডানকোণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ এবং নিচে ডানকোণ এবং বামকোণে মূল্যমান ‘১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ডানপাশে উলম্বভাবে ‘১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে।

নোটটিতে মোট ১৩ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ৫ মি.মি. চওড়া নিরাপত্তা সুতা সংযোজন করা হয়েছে যাতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ এবং ‘১০০০ টাকা’ খচিত রয়েছে। নোটটি নাড়াচাড়া করলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ অংশের নিরাপত্তা সুতার রং লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং ‘১০০০ টাকা’ অংশে একটি উজ্জ্বল রংধনু বার উপর থেকে নিচে উঠানামা করে।

এছাড়া, নোটের ডানদিকে কোণায় মুদ্রিত মূল্যমান ‘১০০০’ রং পরিবর্তনশীল উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি (ওভিএমআই) দ্বারা মুদ্রিত। যাতে নোটটি নাড়াচাড়া করলে এর রং ম্যাজেন্টা থেকে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং মূল্যমানের ভেতরে কোনাকুনিভাবে মুদ্রিত ‘১০০০’ লেখাটি দৃশ্যমান হয়। পাশাপাশি, নোটের সম্মুখভাগের পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা দ্বারা মুদ্রিত যা ইউভি ডিটেক্টর মেশিন দ্বারা দৃষ্টিগোচর হয়।

৫০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০ মি.মি.×৬০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘৫০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংককের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে গাঢ় বাদামি রঙের আধিক্যতা রয়েছে।

ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে আহসান মঞ্জিল, ঢাকা-লেখাটি উভয় পাশে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে ইংরেজিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পেছনভাগের বামদিকের ওপরে ‘৫০’ ও নিচে ‘৫০’ লেখা ব্যাকগ্রাউন্ডে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে যথাক্রমে ’৫০ টাকা’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ মুদ্রিত রয়েছে।

২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৭ মি.মি.×৬০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘২০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে সবুজ রঙের আধিক্য রয়েছে।

ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দির, দিনাজপুরের ছবি এবং নোটের মাঝখানে ‘প্রতিশ্রুত বাক্য’ ও মূল্যমান (বিশ টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা’র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের উপরে বামদিকে মূল্যমান ‘২০’, ডানকোণে ‘২০’ ও নিচে ডানকোণে ‘২০’ মুদ্রিত রয়েছে।

বিষয়টি হলো, সব ধরনের টাকা ও ধাতব মুদ্রায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় গত এপ্রিলের শুরুতে হঠাৎ নতুন নোট বাজারে ছাড়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা শেখ মুজিবের ছবিসংবলিত নতুন নোট বাজারে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোকে নতুন নোট দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ছেঁড়াফাটা ও পুরোনো ময়লা নোটে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ১ জুন থেকে বাজারে নতুন নোট এলে এই সংকট অনেকটা কাটবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন