ঢাকা, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
বেইলি রোডের সিরাজ টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ছাদ থেকে উদ্ধার ১৮ জন
Scroll
আগামী সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হওয়ার সুযোগ নেই: সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন
Scroll
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিল স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন
Scroll
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার
Scroll
হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার অভিযোগে আটক ৫৪
Scroll
শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডির এক যুগ, হেফাজতের বিরুদ্ধে করা ২৫ মামলার সত্যতা মেলেনি
Scroll
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজনই মারা গেছেন
Scroll
রাজশাহী থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়লো
Scroll
ফরিদপুরে গ্রামবাসীর দুপক্ষে টর্চ জ্বালিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২৫
Scroll
সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ২৫ হাজার ৪২৮ বাংলাদেশি হজযাত্রী
Scroll
ইসরায়েলি হামলায় আরো ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত
Scroll
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ
Scroll
তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন না যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

কারাগারে বসেও থেমে নেই হাজি সেলিমের ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯:৩২, ৫ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫৮, ৫ মে ২০২৫

কারাগারে বসেও থেমে নেই হাজি সেলিমের ব্যবসা

হাজি সেলিম। ছবিঃ সংগৃহীত

পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। ক্ষমতায় থাকার সময়ে নানান কারণে তিনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন বহুবার। ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরেও থেমে নেই তার দাপট। 

তার দাপুটে স্বভাব আবারও দেখা মিলেছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে। রোববার (৫ মে) সকালে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায়, কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেটি তিনি তাঁর আইনজীবী প্রাণনাথের হাতে দিয়েছেন।

এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজি সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। পুলিশের হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।

এ প্রসঙ্গে আইনজীবী প্রাণনাথ বলেছেন, তাঁর মক্কেলের (হাজি সেলিম) জাহাজের ব্যবসা রয়েছে। তিনি কারাগারে ডিভিশনও পেয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির অংশ কেটে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেটি তিনি আজ আমাকে দিয়েছেন।

এ ঘটনায় বুঝা যায় হাজি সেলিম যেমন একজন দাপুটে নেতা ঠিক তেমনি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। কারাগারে থেকেও বসে নেই তিনি। সেখান থেকেও ব্যবসার খোঁজ রাখছেন প্রতিনিয়ত।

পান বিক্রেতা থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হাজি সেলিম

হাজি সেলিম মাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তিনি স্বাধীনতার আগে বাবা চান মিয়ার সাথে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটে পান বিক্রি করতেন। স্বাধীনতার পরও পান বিক্রি করেই সংসার চলত তাদের পরিবারের। একপর্যায়ে কোমলপানীয় সেভেন আপের এজেন্সি খুলেন তাঁরা। ওই এজেন্সির আড়ালে নকল কোমলপানীয় বিক্রির অভিযোগে মোহাম্মদ সেলিম ও তার বাবা চান মিয়া এবং বড় ভাই কায়েস মিয়াকে আটক করে পুলিশ।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন নামে সিমেন্টের ব্যবসায় নামেন মোহাম্মদ সেলিম। শুরুর দিকে বাদামতলী থেকে জমাটবাঁধা সিমেন্ট এনে তা ক্রাশ করে বিক্রি করতেন তারা। একপর্যায়ে নিজেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সিমেন্ট কারখানা খুলেন। সিমেন্টের সঙ্গে বালি ও মাটি মিশিয়ে বাজারজাত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

পরে রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের পান ব্যবসায়ী থেকে হাজি মোহাম্মদ সেলিম হয়ে উঠেন মদিনা গ্রুপের মালিক। একপর্যায়ে ফলের ব্যবসা শুরুর মধ্য দিয়ে বাদামতলী, ওয়াইজঘাট ও সদরঘাট এলাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন তিনি।

ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ সেলিম

পরে হাজি সেলিম নিজের সেই ব্যবসায়ী উত্থান আরও এগিয়ে নিতে রাজনীতিকে ‘মই’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পরে তার নাম।

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি নেতা মীর শওকতের হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয় হাজি সেলিমের। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৫ ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর নির্বাচনী এলাকার এমপি হন হাজি সেলিম। এরপর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে তার ব্যবসা ও সম্পত্তির পরিমাণ।

সম্পদের পাহাড় ও ‘তালা হাজি’ নামে খেতাব

এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমপি থাকার সময় হাজি সেলিম নিজ নিয়ন্ত্রণাধীন পাড়া-মহল্লাগুলোয় পঞ্চায়েত প্রথা চালু করেন। ওই সময় অনেকেই তার কাছে বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আসত। এরমধ্যে জমি বা বাড়িসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতেও তার সহযোগিতা চাইতে আসতেন স্থানীয়রা। কিন্তু এসব বিরোধ নিষ্পত্তির বদলে হাজি সেলিম নামমাত্র মূল্যে ওই জমির কাগজপত্র কিনে নিতেন। জোরপূর্বক উচ্ছেদের জন্য বিচার শেষে তিনি ঘরে বা দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিতেন। এজন্য এলাকায় ‘তালা হাজি’নামেও খেতাব পেয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুড়িগঙ্গার তীরে চাঁদনীঘাটে ওয়াসার পানির পাম্পের জমি দখল করে সেখানে পেট্রলপাম্প তৈরি করেন হাজি সেলিম। এছাড়া সোয়ারীঘাটে নদীতীর দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন চাঁদ সরদার কোল্ড স্টোরেজ। এরপর নবাববাড়ী এলাকায় জগন্নাথ কলেজের ছাত্রাবাস দখল করে সেখানে গুলশান আরা প্লাজা নামে বিশাল ভবন নির্মাণ করেন তিনি। আরমানিটোলা এলাকায় এক বৃদ্ধার সম্পত্তি দখল করে নির্মাণ করেন এমটিসি টাওয়ার। নলগোলায় ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি দখল করে বিশাল ভবন নির্মাণ করেন সেলিম।

এখানে থেমে থাকেননি হাজি সেলিম। তিনি চকবাজারের ফ্রেন্ডশিপ মার্কেট ও জেলখানার পাশে ৫০-৬০ বছরের পুরনো ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সেখানে মদিনা আশিক টাওয়ার ও হাজি সেলিম টাওয়ার নামে দুটি বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করেন। মার্কেট নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নতুন দোকান দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই কোনো দোকান দেননি তিনি। এ কারণে দুই ব্যবসায়ী আত্মহত্যাও করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এভাবেই হাজি সেলিম রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী, নবাববাড়ী, আরমানিটোলা, মিটফোর্ড রোড, নবাবপুর রোড, ইমামগঞ্জ, ইসলামপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, ফতুল্লা এলাকায় জমিজমার মালিক হন।

এক সময়কার পান বিক্রেতা পরে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং দাপুটে রাজনীতিবিদ হাজি সেলিম গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন।

 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসইউ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন