শিরোনাম
ফরিদপুরের প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪:৪১, ১৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৬:০৩, ১৩ মে ২০২৫
মৃত ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বুলবুল ও উদ্ধার করা চিরকুট। ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
মৃত নুরুজ্জামান বুলবুল কৈজুরীর বাসিন্দা মরহুম মোজাফফর হোসেন রাঙা মিয়ার ছোট ছেলে। তার বাবা ফরিদপুরের মুন্সি বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। রাঙা মিয়া চার বছর আগে মারা যান। স্ত্রী ও ৩ মেয়ে নিয়ে কৈজুরিতে পৈত্রিক বাসভবনে বসবাস করতেন বুলবুল।
উদ্ধারকৃত চিরকুটের একটিতে লেখা ছিলো- ‘বিল্লাল ভাই আমাকে আর বাঁচতে দিলেন না।’ ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীক বিরোধ ও পারিবারিক ঝামেলার কারণে বুলবুল আত্মহত্যা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, নুরুজ্জামান বুলবুল আগেরদিন রোববার (১১ মে) দুপুরের দিকে তাদের তিনতলা বাসভবনের দোতলার ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। এরপর তার আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বুলবুলের লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ওসি বলেন, ‘এটি আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তার মৃত্যুর কারণ।’
জানা গেছে, নিহত নুরুজ্জামান বুলবুল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঠিকাদারি করতেন। সর্বশেষ তিনি বাগেরহাটে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের বড় কাজ শেষ করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রথমদিকে পাশের হাড়কান্দি নিবাসী জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের সাথে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যোগ দেন।
মুন্সিবাজার বাইপাস মোড়ের পাশে বুলবুল ও বিল্লালের যৌথ মালিকানায় কেনা জমির ওপরে চারতলা একটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়। ব্যবসায়ীক লেনদেনের বাইরেও বিল্লালের সাথে তার বড় ভাই-ছোটভাই সুলভ সম্পর্ক ছিলো।
জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলার আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের মুরগি খামারের ম্যানেজার ছিলেন বিল্লাল হোসেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোশাররফ হোসেনের পতনের পর থেকে বিল্লাল হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
নিহত বুলবুলের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল হোসেনের বক্তব্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে বুলবুলের পরিবারের কেউও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মৃত নুরুজ্জামান বুলবুলের স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তার মেঝো মেয়ের সাথে প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদের সাথে বিয়ে হয়। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে বুলবুলের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের ঝামেলা চলছিলো। এর আগে তিনি ঝগড়া এড়াতে মেয়েদের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান।
বুলবুলের মরদেহের সাথে উদ্ধার হওয়া আরেকটি চিরকুটে লিখা, ‘আল্লাহ পাক যদি আমার মৃত্যু দেয় তাহলে আমার মেয়েরা যেনো আমার মরা মুখ না দেখে আর কবর যেনো আমার মায়ের কবরের পাশে হয়, এ বাড়িতে নয়।’
ঢাকা এক্সপ্রেস/এনএ