ঢাকা, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

২৬ বৈশাখ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত
Scroll
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাত থেকে বিক্ষোভ
Scroll
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
Scroll
নারায়ণগঞ্জে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা, আহত ৫
Scroll
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বাদ জুমা জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর
Scroll
গুম থাকা বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের রাজধানীর শাহিনবাগ বাসায় পরোয়ানা নিয়ে পুলিশ, এসআই প্রত্যাহার
Scroll
প্রাইম এশিয়ায় পারভেজ হত্যা: আসামি ফারিয়া হক টিনা গ্রেপ্তার
Scroll
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারো থাকছে না ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার, পরিপক্ক হলেই পাড়া যাবে আম
Scroll
পাকিস্তান ও ভারত সংঘাত আমাদের কোনো বিষয় নয়: মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স
Scroll
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত

পাক-ভারত অস্থিরতায় বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:১৭, ৮ মে ২০২৫ | আপডেট: ১০:৪০, ৮ মে ২০২৫

পাক-ভারত অস্থিরতায় বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে?

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশি দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধের দামামা বাজছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আবারো বড় ধরনের ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অংশীদার না হলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে বলে মত তাদের।  

এদিকে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ভারতে গোলাবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। দুই দেশের উত্তেজনাকর অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য দু’পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার (৭ মে) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অবস্থান জানায়।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার চেতনায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। আর তা হবে এ অঞ্চলের জনগণের শান্তি ও কল্যাণের জন্য।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে বুধবার বিকালে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে বসেন। 

অন্যদিকে, দুই দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে সরকারের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হলে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের উপর এর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে যুদ্ধের পক্ষ মনে হয়।

সর্বব্যাপী যুদ্ধের ঝুঁকি বিবেচনায় উভয় দেশের পিছিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখলেও পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না তারা।

যুদ্ধ শুরুর দামামা বেজে ওঠার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে যাতে কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকার পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

প্রতিবেশী দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণের পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। যুদ্ধের আতঙ্কে বুধবার দিনের লেনদেনের শুরুতেই ভীত হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। এতে তড়তড়িয়ে সূচক নামতে থাকে। দিনশেষে একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট।

যুদ্ধ লেগে যাওয়ার আশঙ্কাতেই এমন যখন পরিস্থিতি তখন প্রতিবেশী দেশ দুটি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তা পুঁজিবাজারের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনীতির সব খাতেই তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশে বলে মনে করেছেন অনেকেই।

দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের দিনে ভারত থেকে বিএসএফ বাংলাদেশের তিন জেলার বিভিন্ন সীমান্তে ঠেলে দিয়েছে ১২৫ জনকে। তাদের আটক করে যাচাই-বাছাই করছে বিজিবি। একই দিন ঢাকামুখী তিনটি ফ্লাইটকে পথ পরিবর্তন করতে হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলো কুয়েত ও তুরস্ক থেকে আসছিল।

এর মধ্যে তুরস্ক থেকে রওনা হওয়া টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুয়েত থেকে রওনা হওয়া জাজিরা এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটকে ঘুরিয়ে দুবাইয়ে নেওয়া হয়। একই এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইট কুয়েতে ফিরে যায়।

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই বড় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধের ফলে অন্য দেশের ওপর বাণিজ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব এমনিতে চলে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণে সেই প্রভাবটা বেশিই হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনীর বলেন, আমাদের ওপরে সরাসরি প্রভাবতো ওইভাবে নাই। কিন্তু এই অঞ্চলে যখনই সংঘাত বা বিরোধ বা যুদ্ধ যেটাই হোক না কেন, তার একটা প্রভাব অবশ্যই আমাদের ওপর আসবে। এক নম্বর হল, দুটি বড় দেশের মধ্যে যখন এ ধরনের লড়াই হয়, তখন এটার কারণে আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হচ্ছে। তারপর বিভিন্ন রকমের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআিইপিএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মুনীর বলেন, আকাশে ঝুঁকির কারণে ঘুরপথে উড়োজাহাজ চলাচলে ব্যয়ে বেড়ে যাওয়া এবং ভারতের বিমানবন্দর বন্ধের প্রভাব এরইমধ্যে পড়ছে। 

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যেহেতু চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে, যদি দক্ষিণ এশিয়ার দুটি বড় দেশের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে, তার প্রভাব শুধু বাংলাদেশ না, পুরো অঞ্চলের ওপরই পড়বে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, বাংলাদেশ চায়, ভারত-পাকিস্তান যেন যুদ্ধ থেকে সরে আসে। কারণ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থা চলছে। এমনিতে পরিস্থিতি ভালো না। এর মধ্যে এই সংঘাতে অবস্থার আরও অবনতি হল, স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হল। ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যাতায়াত, যোগাযোগ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই রকম সাংস্কৃতিক যোগাযোগের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে আদান-প্রদান তা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। এটা সবার উপরে পড়ছে, আমাদের ওপরও পড়ছে।

এদিকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনার পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশ যেন দূরে অবস্থান করে, সেই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এদিক থেকে সরকারের তরফে দায়িত্ব জ্ঞানহীন কোনো মন্তব্য না করার পরামর্শও এসেছে তাদের দিক থেকে।

বিআইপিএসএসের ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে এখন পরিস্থিতিতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, দুপক্ষকে শান্তিমূলক উপায় বেছে নেওয়ার জন্য আহ্বান করা এবং যাতে সমস্যাটির একটি আশু সমাধান হয়, সেজন্য আশা করা বা প্রচেষ্টা করা। এ ছাড়া আর তেমন কিছু নাই। আমাদের খুব নিবিড়ভাবে ব্যাপারটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ এটা শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তানের বিষয় না।

তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বহীন কোনো বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। কিছুদিন আগে আমরা দায়িত্বহীন বক্তব্য দেখেছি। এটা উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য যাতে ভবিষ্যতে না আসে, সেটাই আমরা আশা করব। আমাদের আশাটা হল, এই অঞ্চলে একটি শান্তি, স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সব দেশের মধ্যে এক ধরনের সহযোগিতা থাকবে। সেটা তাড়াতাড়ি ফিরে আসে, সেটা আমরা আশা করব।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ বলেন, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বলে এখানে আমরা তাদেরকে খোঁচাব, সেটাওতো না। সুতরাং আমাদেরকে সেই লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে, সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে…যাতে ভারত আমাদের সমস্যাগুলো বোঝে এবং আমাদের অসদাচরণ না করে। আমরা যদি তাদের সঙ্গে সদাচরণ না করি, তাহলে তাদের থেকে আমরা কীভাবে আশা করব সদাচরণ।

প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার শোধ নিতে ভারত মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলা বর্ষণ করে।

পাকিস্তান বলেছে, ভারতের হামলায় তাদের অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ১৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দেশটির পুলিশ।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তবে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তিনটি যুদ্ধবিমান ‘বিধ্বস্ত’ হওয়ার তথ্য দিয়েছে রয়টার্স। 

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন