ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ জ্বিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
চিকিৎসকদের পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে সেবার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
Scroll
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
Scroll
প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
Scroll
দেশজুড়ে বয়ে চলা তাপদাহের মধ্যে জরুরি সাত নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
Scroll
বজ্রপাতের বিষয়ে ২১ জেলায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা
Scroll
সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ৫৭০ হজযাত্রী, ছয় জনের মৃত্যু
Scroll
ভ্লাদিমির পু‌তি‌নের স‌ঙ্গে বৈঠক কর‌তে তুরস্ক যা‌চ্ছেন ভলোদিমির জে‌লেন‌স্কি
Scroll
আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ
Scroll
প্রথম রবিবারের ভাষণে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেন পোপ লিও
Scroll
টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেন বিরাট কোহলি
Scroll
মিচেল ও কারেনকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন রিশাদ হোসেন

বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:২১, ১২ মে ২০২৫ | আপডেট: ০৯:২৫, ১২ মে ২০২৫

বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ২ জুন সংকোচনমূলক বাজেট ঘোষণা করবে। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বাজেটের আকার ছোট করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। কারণ হিসেবে তারা জানান, ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায়ও কম হয়েছে। তাই নিরুপায় হয়েও বাজেট কাটছাট করছে সরকার। 

জানা যায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় তা সাত হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। টাকার দাম ক্রমাগত কমে যাওয়ায় তা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন— শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যেতে পারে। এটি মোট বাজেটের ১৬ দশমিক আট শতাংশ বা এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মূল ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ধরলে বাজেটের ওপর খরচের চাপ বাড়বে। ঋণ পরিশোধে খরচ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অন্যান্য খাতে খরচের সুযোগ কমছে।

খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও পরিচালন বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে আগামী অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ভর্তুকির মতো খরচ চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজস্ব আদায় কম হওয়া সত্ত্বেও কাঠামোগত সংস্কারই আগামী বাজেটে মূল লক্ষ‍্য থাকবে অন্তর্বর্তী সরকারের। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিভিশন ভাষণে বাজেট উপস্থাপন করবেন। 

প্রস্তাবিত সংস্কারে খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মূল উদ্যোগের মধ্যে আছে— জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে করনীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা। প্রশাসনিক সংঘাত এবং দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমানো। এই সংস্কারের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়বে এবং করদাতাদের হয়রানি কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

সরকার সব পণ্যে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে অসমভাবে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা সাত দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন। মাত্র সাত দশমিক চার শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে সতর্ক করে বলা হয়েছে—রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কম হওয়ায় অন্যান্য বিনিয়োগে সরকারের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক জাতীয় শুল্কনীতির আওতায় করের টাকা স্বচ্ছভাবে খরচের কাঠামো, অভিন্ন ভ্যাট হার এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানোসহ একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে।

আগামী বাজেটে দেশের ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হবে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এই এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, করদাতারা কীভাবে তাদের অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা জানার অধিকার রাখেন। বাজেট পর্যবেক্ষণ করা হলে টাকার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আমরা বাজেটের আগে অনেক আলোচনা দেখি, কিন্তু সেসব পরামর্শ বাস্তব বাজেটে কতটা প্রতিফলিত হয় তা জানা যায় না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘পাবলিক মানি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী সংসদে প্রতিবেদন পেশ করাও অনেকটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার থাকলেও বাজেট প্রণয়নে পরামর্শমূলক প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, এখন নমনীয় বাজেটের সুযোগ নেই। বরং আরো বেশি শৃঙ্খলিত ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যয়ের কাঠামো দরকার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নয়ন ব্যয়ের সক্ষমতা না থাকলে বাজেট সংকোচনই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত আর্থিক সুফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, বরং বরাদ্দের অকার্যকারিতা প্রকট হয়ে উঠছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অন্য সময়ের মতো উচ্চাভিলাষী না হয়ে অর্থায়নযোগ্য বাজেট করা প্রয়োজন। জনগণকে দেখানোর মতো না করে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রাখতে হবে। আয়, ব্যয়, ভর্তুকি সব ক্ষেত্রেই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব মিলিয়েই আগামী অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট করা হলে সেটি কার্যকর হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি শুধু একটি রুটিন বাজেট নয়। এটি হবে কাঠামোগত সংস্কারের জন্য একটি রূপরেখা; যা পরবর্তী সরকারের জন্য ভিত্তি তৈরি করবে। 

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন