শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৫, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
নতুন আগত রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত সপ্তাহে তারা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ে এ চিঠি পাঠায়। রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেড় বছরের মধ্যে এই নতুন রোহিঙ্গারা এসেছে। এর মধ্যে গত বছরের মে-জুনের পর থেকে প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
শুধু গত সপ্তাহেই রাখাইন রাজ্য থেকে এসেছে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার এবং আলাদাভাবে আরও ৫ হাজার ৯৩০ জন। নতুন আসা রোহিঙ্গারা মোট ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী এবং বাকিরা পুরুষ।
অন্য এক সূত্র জানিয়েছে, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ কক্সবাজারের ২০টি ক্যাম্পে আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করছে। ক্যাম্পভিত্তিক সংখ্যা অনুযায়ী: ক্যাম্প-২৭-এ ৮,৩৬৮ জন, ক্যাম্প-২৬-এ ৭,৭৭২ জন, ক্যাম্প-২৪-এ ৬,৩৯৫ জন, ক্যাম্প-৯-এ ৫,৯৫৫ জন, ক্যাম্প-১২-তে ৫,৯৪০ জন, ক্যাম্প-১ই-তে ৫,৭৮৮ জন, ক্যাম্প-১৮-তে ৫,৭৪৬ জনসহ অন্যান্য ক্যাম্পেও তারা অবস্থান করছে। অনেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আশ্রয় নিয়েছে।
আবাসন সংকট নিয়ে ইউএনএইচসিআর সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। যদিও সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি, তবে মৌখিকভাবে জাতিসংঘ সংস্থাকে জানানো হয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গার জন্য নতুন আবাসন তৈরি করা কঠিন হবে। বিকল্প হিসেবে ইউএনএইচসিআর দোতলা আবাসনের প্রস্তাব দিয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আগে থেকেই ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যা বাংলাদেশে মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাবাসন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তার ওপর নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গার আবাসনের জন্য ইউএনএইচসিআরের একটি চিঠি পেয়েছি। তবে নতুনভাবে ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলবে, কারণ এতে রাখাইনে থাকা অন্যান্য রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হতে পারে।’
সূত্রমতে, রাখাইনে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলেই রোহিঙ্গাদের এই নতুন ঢল দেখা দিয়েছে। জান্তা সরকারের পতনের পরও প্রবেশ থামেনি। নাফ নদী ছাড়াও পাহাড়ি পথ ধরে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভর করেই রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা চলছে। তবে সম্প্রতি বাজেট সংকটের কারণে এই সহায়তার পরিমাণও কমে গেছে। এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যদি সরকার নতুন ঘর নির্মাণের অনুমতি দেয়, তাহলে ইউএনএইচসিআর দাতা সংস্থাগুলোর কাছে অর্থ সহায়তা চাইবে।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে— ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারী ৩,৮৯০ জন এবং পুরুষ ৩,৯৩০ জন। ১৮-৫৯ বছর বয়সী নারী ২৭,১৭৩ জন এবং পুরুষ ১৯,৮২৫ জন। ১২-১৭ বছর বয়সী নারী ৭,৩০১ জন এবং পুরুষ ৬,৪০৮ জন। ৫-১১ বছরের নারী ১২,২০৭ জন এবং পুরুষ ১১,৭২৭ জন। ১-৪ বছরের নারী ৯,১৫৫ জন এবং পুরুষ ৯,২৫৫ জন। এক বছরের নিচে রয়েছে নারী ১,২৯০ জন এবং পুরুষ ১,৩২০ জন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশের ওপর যে চাপ ছিল, নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ সেই সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ার বাস্তবতায় এই সংকট আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ বিডি