ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬
শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:১১, ২৮ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে পরাজিত হন। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করেন ইশরাক।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তৎকালীন ফলাফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। এর প্রেক্ষিতে ২২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণা দেন।
এরপরও শপথ গ্রহণে তৈরি হয় নতুন জটিলতা। গত ১৪ মে হাইকোর্টে একজন নাগরিক রিট করেন, যাতে ইশরাককে শপথ না পড়ানোর আবেদন জানানো হয়। হাইকোর্ট রিটটি ২২ মে খারিজ করে দেন, উল্লেখ করে এটি শুনানিযোগ্য নয়। তবে পরে সেই আদেশের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করেন রিটকারী। বর্তমানে বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের শপথ কার্যক্রমে যেতে পারছে না। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী শপথের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু নতুন রিট ও আপিলের কারণে আমরা অপেক্ষা করছি।
ইশরাক হোসেনের শপথ নিশ্চিত করতে ‘ঢাকাবাসী’ এবং ‘ডিএসসিসি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন’ ব্যানারে তার সমর্থকরা ১৫ মে থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নগর ভবনের প্রধান ফটকে। গেটগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নাগরিক সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
প্রতিদিন নগর ভবনের ভেতরে ও বাইরে মিছিল-স্লোগানে মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দুই দফা আদালতের রায় ও গেজেট প্রকাশের পরও কেন ইশরাক ভাইকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না, সেটিই আমাদের প্রশ্ন।
ডিএসসিসির একজন কর্মচারী বলেন, আমরা শুধু চাই আমাদের মেয়র, জনগণের মেয়র ইশরাক ভাই দায়িত্ব গ্রহণ করুন। তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাবো। নতুবা আন্দোলন চলবেই।
এদিকে সেবাপ্রার্থীরা নগর ভবনে এসে ফিরিয়ে যাচ্ছেন। সড়ক, পরিচ্ছন্নতা, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
এ ইস্যুতে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আদালতের রায়ে বৈধভাবে নির্বাচিত ও গেজেটপ্রাপ্ত মেয়র ইশরাককে শপথ নিতে না দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। সরকারের উচিত দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। তিনি আরো বলেন, সরকার আইনি প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়ে একদিকে আদালতের রায় উপেক্ষা করছে, অন্যদিকে জনগণের রায়কে অবমূল্যায়ন করছে।
সর্বশেষ আজ বুধবার ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এই আদেশ দেন। মামলাটি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ
