ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

সাগরে নিম্নচাপ, বৃষ্টি ঝরতে পারে সারা দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ০৯:৪১, ২৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৫৪, ২৯ মে ২০২৫

সাগরে নিম্নচাপ, বৃষ্টি ঝরতে পারে সারা দিন

ফাইল ফটো

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সারা দিন এবং আগামীকাল শুক্রবারও দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর— চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে, তবে শনিবার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ কম হতে পারে।

এদিকে, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতি ভারী বৃষ্টির মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো এলাকায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে সেটিকে অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়।

আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের ছয়টি অঞ্চলে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলগুলো হলো— খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, এসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি বয়ে যেতে পারে।

বৃষ্টি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলের চারটি বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কোথাও কোথাও তা বিপৎসীমা অতিক্রমও করতে পারে।

কেন্দ্রটির নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্র ও শনিবার ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে। একইভাবে সিলেটের সারিগোয়াইন, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, হবিগঞ্জের খোয়াই ও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানি দ্রুত বাড়বে এবং কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ২৯ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত— এই তিন দিনজুড়ে দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।

মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহে ভুগেছে। এ মাসেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। কিন্তু মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ধীরে ধীরে বৃষ্টি শুরু হয় এবং শেষ সপ্তাহে তা বেড়ে যায়। এখন নিম্নচাপের কারণে আরো ব্যাপক ও ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, যা স্বস্তি দিলেও নতুন করে নদীভাঙন, পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসাধারণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষক ও নৌযান চালকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন