ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আইএলওর বৈশ্বিক কর্মসংস্থান পূর্বাভাস 

এ বছর ৭০ লাখ চাকরি কমার শঙ্কা 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১০:১৩, ২৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২২, ২৯ মে ২০২৫

এ বছর ৭০ লাখ চাকরি কমার শঙ্কা 

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক (ডাব্লিউইএসও) ২০২৫’-এ উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৭০ লাখ চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার (২৮ মে) গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বৈশ্বিক শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ চিত্র, ঝুঁকি ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বিশ্বব্যাপী চাকরির এই সংকোচনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক পরিবর্তন এবং জলবায়ুজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন একটি দেশ, যেখানে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাঠানো হয়। এ অবস্থায় বৈশ্বিক চাকরির সংকোচন বাংলাদেশের জন্য ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’— এমন সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন আইএলওর বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর ট্রমো পৌটি আইনেন।

আইএলও মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হুংবো বলেন, এ প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তরুণ ও নারীদের জন্য মর্যাদাসম্পন্ন এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরির প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। যদিও বিশ্বজুড়ে শিক্ষার হার বাড়ছে, কর্মক্ষেত্রে শিক্ষাগত উপযুক্ততার অভাব এখনো বিদ্যমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে মাত্র ৪৭ দশমিক সাত শতাংশ কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের বর্তমান কাজের জন্য উপযুক্ত ছিল। গত এক দশকে কম শিক্ষিত কর্মীর হার কিছুটা কমে ৩৭ দশমিক নয় শতাংশ থেকে ৩৩ দশমিক চার শতাংশে নামলেও, অতিশিক্ষিত কর্মীর হার বেড়ে ১৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক নয় শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা প্রকট, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব জাতীয় গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা সবচেয়ে বেশি এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

এ ছাড়া, বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য সংকোচনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো জানানো হয়, ৭১টি দেশে প্রায় আট কোটি ৪০ লাখ চাকরি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভরশীল, যার মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রয়েছে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ চাকরি। বর্তমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এসব চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে এশিয়ায় বেশি চাকরি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু অনুপাতের দিক থেকে কানাডা ও মেক্সিকো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে— যেখানে ১৭ দশমিক এক শতাংশ চাকরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

আইএলও প্রধান গিলবার্ট হুংবো বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে এগোচ্ছে। যদি আমরা শ্রমবাজারের পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হই, তবে এর বিরূপ প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়বে। একে প্রতিহত করতে হলে এখনই সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ, সামাজিক সংলাপ উন্নীত করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনে নারী কর্মীদের অগ্রগতির দিকেও আলোকপাত করা হয়। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ ২০১৩ সালের ২১ দশমিক দুই শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৩ দশমিক দুই শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ১৮ শতাংশের আশপাশে থাকলেও নারীরা এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক ও সেবামূলক পেশায় সীমাবদ্ধ। নির্মাণ, প্রকৌশল বা প্রযুক্তিনির্ভর খাতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি যেমন শ্রমনির্ভর, তেমনি এটি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের ওপরও অত্যন্ত নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক শ্রম সংকোচন ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলো যদি যথাযথভাবে মোকাবিলা না করা যায়, তবে তা দেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আইএলও প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রতিবেদন একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করে, অন্যদিকে এটি আমাদের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখাও দেয়— কীভাবে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারি। প্রযুক্তির সুফল যাতে সবাই পায়, সেজন্য আমাদের এখনই দ্রুত, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রত্যয়ীভাবে কাজ শুরু করতে হবে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন