ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

বিশ্বের দ্রুততম ফ্ল্যাশ মেমোরি তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩:০২, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০১, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বের দ্রুততম ফ্ল্যাশ মেমোরি তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বিশ্বের দ্রুততম ফ্ল্যাশ মেমোরি উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের তৈরি নতুন নন-ভোলাটাইল মেমোরিটি মাত্র ৪০০ পিকোসেকেন্ডের মধ্যে ডেটা রিড ও রাইট করতে সক্ষম। ‘পিকোসেকেন্ড-লেভেল’ মেমোরি প্রযুক্তি বলতে বোঝায়, যা এক ন্যানোসেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ে, অর্থাৎ এক সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ে ডেটা রিড ও রাইট করতে পারে।

গবেষকরা তাদের এই যুগান্তকারী চিপের নাম দিয়েছেন ‘পিওএক্স’ (ফেজ-চেঞ্জ অক্রাইড)। এই উদ্ভাবন ডেটা রিডিং ও রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডকে (প্রতি সেকেন্ডে ২০ লাখ অপারেশন) বহু গুণে ছাড়িয়ে গেছে।

বর্তমানে ব্যবহৃত স্ট্যাটিক র‍্যান্ডম অ্যাকসেস মেমোরি (এসআরএএম) এবং ডাইনামিক র‍্যান্ডম অ্যাকসেস মেমোরি (ডিআরএএম)-এর ডেটা রাইট করার গতি সাধারণত ১ থেকে ১০ ন্যানোসেকেন্ড। তবে এই মেমোরিগুলো ভোলাটাইল হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ডেটা হারিয়ে যায়।

অন্যদিকে, এসএসডি বা ইউএসবি ড্রাইভে ব্যবহৃত ফ্ল্যাশ মেমোরি নন-ভোলাটাইল হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ না থাকলেও ডেটা সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু এদের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের গতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যা সাধারণত মাইক্রোসেকেন্ড থেকে মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত সময় নেয়। এই কারণে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেমে ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করলে ডেটা প্রসেসিংয়ের গতি কমে যায়।

এই পরিস্থিতিতে পিওএক্স মেমোরি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি একইসাথে নন-ভোলাটাইল এবং পিকোসেকেন্ড-স্তরের গতিসম্পন্ন হওয়ায় ডেটা সংরক্ষণে যেমন কার্যকর, তেমনই এর বিদ্যুৎ খরচও অত্যন্ত কম। এর ফলে বর্তমান এআই প্রযুক্তিতে ডেটা স্থানান্তরের ধীরগতি এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে।

ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চৌ পেং এবং তার গবেষণা দল প্রচলিত সিলিকনের পরিবর্তে দ্বিমাত্রিক ডিরাক গ্রাফিন ব্যবহার করেছেন। এই উপাদানটিতে ইলেকট্রন খুব দ্রুত এবং বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারে।

তারা ‘২ডি সুপার-ইনজেকশন’ নামক একটি অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে মেমোরি চ্যানেলের গসিয়ান দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রণ করে চার্জ প্রবাহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। এর ফলে চার্জ প্রায় কোনো বাধা ছাড়াই মেমোরির সংরক্ষণ স্তরে পৌঁছাতে পারে, যা প্রচলিত প্রযুক্তির গতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগের জন্য তারা ইতিমধ্যেই উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। প্রযুক্তির প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে এবং অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।

রাষ্ট্রীয় মূল চিপ ও সিস্টেম গবেষণাগারের গবেষক লিউ চুনসেন বলেন, ‘আমরা এখন একটি ছোট আকারের, সম্পূর্ণ কার্যকর চিপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। পরবর্তী ধাপে আমরা এটি স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি। এর ফলে স্থানীয়ভাবে এআই মডেল চালানোর সময় প্রচলিত স্টোরেজ প্রযুক্তির কারণে ল্যাগ বা অতিরিক্ত গরম হওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।’
 

আরও পড়ুন