শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১, ৭ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষণাপত্রের কিছু দিক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তারা আপত্তি তোলেনি। বরং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে দলগুলো।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকীর ঠিক পরপরই বদলে যেতে থাকা রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা এসব দল আগামী নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা বলছে, নির্বাচন যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং সমান সুযোগের ভিত্তিতে না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক পরিবেশে ভারসাম্য এবং দলগুলোর সমান সুযোগ— এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে নির্বাচন আয়োজনের বাস্তব ভিত্তি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করছে তারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গতি এনেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এবং সবাই নজর রাখছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে— কখন আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকায় দলের এক জনসভায় ভার্চুয়াল বক্তব্যে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের যে প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, বিএনপি তা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। তার মতে, এটি গণতন্ত্রের পথে ফিরে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একাধিক বিবৃতিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে পুরোপুরি নাকচ না করলেও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এখনো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাদের মতে, বর্তমান প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে ভারসাম্যহীন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা পক্ষপাতদুষ্ট, এবং নির্বাচনী মাঠ একতরফাভাবে একটি দলের পক্ষে। এই অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রশাসন ঠিকভাবে কাজ করছে না, এবং এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার বক্তব্যে উঠে আসে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার চিত্র— এই অবস্থায় নির্বাচন হলে সেটি একতরফা হয়ে যেতে পারে।
জামায়াতের এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য নয়, তবে ঘোষণার সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিনটি একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী দিন। ওই দিনে শুধু জুলাই ঘোষণাপত্র দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকলে সেটি অধিক মর্যাদাপূর্ণ হতো। এরপর ৮ আগস্ট, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তির দিনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হলে সেটি রাজনৈতিকভাবে আরো গ্রহণযোগ্য ও পরিপক্ব হতো। এই সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার একটি ঐতিহ্যও রক্ষা করা যেত।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও নির্বাচনকে স্বাগত জানান। তিনি মনে করেন, নির্বাচন অবশ্যই সংস্কারকৃত প্রক্রিয়ায় হতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই দ্রুত নির্বাচনের জন্য দাবি করে আসছিল। রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাও একই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনেকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে দায়িত্ব শেষ করতে চান বলেও জানা গেছে। এসব মিলিয়ে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে চাপ বেড়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় একটি রাজনৈতিক পথরেখা স্পষ্ট হয়েছে।
বিএনপি এই ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ তৈরি হবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি আশা করে এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
তবে ঘোষণাপত্র নিয়ে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের হতাশা রয়ে গেছে। তারা বলছে, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আপত্তি না থাকলেও ঘোষণার ভাষা, প্রক্রিয়া ও সময় নির্বাচন আয়োজনের যথার্থ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সন্দেহ জাগিয়ে তুলেছে। এই তিনটি দলই এখন জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচিও দিতে প্রস্তুত।
জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে এবং নির্বাচনের আগে সমান সুযোগ নিশ্চিত না হলে নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়বে। তার মতে, বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই সরকারকে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এর আগে মাঠপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির প্রতিশ্রুতি সরকারকে স্পষ্টভাবে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, জুলাই ঘোষণায় গণহত্যাকারীদের বিচারের বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল, যা হতাশাজনক।
ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকেও একই ধরনের বক্তব্য এসেছে। দলের আমির রেজাউল করীম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে অথবা গণভোটের ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন আয়োজন এই সনদের ভিত্তিতেই করতে হবে।
তিন দলের নেতারা আরো মনে করেন, বিএনপির চাহিদা অনুযায়ীই জুলাই ঘোষণাপত্র গঠিত হয়েছে। তাদের দাবি, ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে এক বৈঠকের পর থেকেই সরকার এই ঘোষণার রূপরেখা তৈরি করেছে। খসড়া ঘোষণাপত্র অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়নি। শেষ মুহূর্তে গিয়ে কেবলমাত্র জামায়াতকে সম্পৃক্ত করা হয়; ইসলামী আন্দোলনকে বিষয়টি জানানোও হয়নি। গুলশানে এক বৈঠকে সরকারের ছয়জন উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেন। সেখানে ইসলামী আন্দোলনের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
পরিস্থিতির এমন সমীকরণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাবে।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, ঘোষণাপত্রে যদি ৫৪ বছরের শাসন ব্যবস্থার একটি স্বচ্ছ মূল্যায়ন থাকত, তাহলে সেটি আরো তাৎপর্যপূর্ণ হতো। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ না বদলালে কেবল সনদ বা ঘোষণাপত্র দিয়ে বাস্তব রাজনৈতিক সংস্কার সম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন রয়ে গেছে— সরকার ও নির্বাচন কমিশন কীভাবে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করবে এবং বিরোধী দলগুলোর উদ্বেগ প্রশমিত করে আগামী নির্বাচনে সবাইকে আস্থা নিয়ে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে কি না। আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারিত হবে এই প্রশ্নগুলোর জবাবের মধ্য দিয়েই।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসিতে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। চিঠিতে নির্বাচনের সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের পাশাপাশি রোজা শুরুর আগেও উল্লেখ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে আরো বলা হয়, বিগত ১৫ বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহাআনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়, তেমন আয়োজনের ওপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন। চিঠিতে নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যয়ের কথাও ইসিকে জানানো হয়।
অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে ইসির প্রস্তুতি: নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন আইনবিধি ঠিক করার পাশাপাশি ভোটার তালিকা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসি। সব কাজ অক্টোবরের মধ্যে গুছিয়ে আনতে চায় ইসি।
এদিকে মধ্য সেপ্টেম্বরে দেশে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দল। যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি ও চারজন স্থানীয়। নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও পরিবেশ মূল্যায়ন করবেন তারা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ইসির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আরপিওর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হবে। পরে অধ্যাদেশের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আরপিওর সংশোধনীতে বিনা ভোটে বিজয় ঠেকাতে ‘না ভোট’ ফিরিয়ে আনা; জোটবদ্ধ হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট করা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হতে না পারা; পুরো আসনের ভোট গ্রহণ বন্ধের ক্ষমতা ইসিকে ফিরিয়ে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি এবং ভোট গ্রহণে ইসি ইভিএম পদ্ধতি বাদ রাখার প্রস্তাব থাকছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আচরণবিধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে।
ইসি এরই মধ্যে সীমানা আইন সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটার তালিকা সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা (সংসদ ও স্থানীয় সরকার), স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যম নীতিমালা জারি করেছে। পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে আবেদন পেলে বিধি অনুযায়ী শেষ করা হবে। নির্বাচনী ম্যানুয়াল দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত আরো তিনটি আইন ও বিধি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে– নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধন এবং ইসি সচিবালয় আইন। ভেটিং শেষে এগুলো উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।
ভোটার তালিকা ও প্রবাসী ভোটার: ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল ইসি, যেখানে ১২ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। আর ১০ আগস্ট বাদ পড়া সাড়ে ৪৪ লাখের মতো ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ ও মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খসড়া ভোটার তালিকার ওপর দাবি-আপত্তির নিষ্পত্তি ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া সংশোধিত আইন অনুযায়ী, নতুনদের ভোটার করতে ভোটের এক মাস আগে সর্বশেষ সম্পূরক তালিকা প্রকাশ হবে। সব মিলিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় পৌনে ১৩ কোটি ভোটার হতে পারে বলে ধারণা ইসি কর্মকর্তাদের।
এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও ইসি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে ইসি একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। শিগগির পরিকল্পনা কমিশনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে ইসি আশা করছে।
ইসি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত নয়টি দেশ থেকে ৪৮ হাজার ৮০ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার হতে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৯ হাজার ৬৪৬ জন। ১৭ হাজার ৩৬৭ জন এরই মধ্যে ভোটার হয়েছেন।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ: ইতোমধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সময় রয়েছে। শুনানি শেষে এক মাসের মধ্যে এগুলো চূড়ান্ত হবে। ইসি কর্মকর্তাদের দাবি, অতীতের মতো এবার কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নয়, বরং নিয়ম মেনে নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করছেন তারা।
নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা: নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি। ভোট গ্রহণের সরঞ্জাম হিসেবে সুঁই-সুতা, মোমবাতিসহ আটটি আইটেম এ সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে তারা। সারাদেশের আঞ্চলিক ও উপজেলা-থানা নির্বাচন অফিসগুলোতে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী ও যাচাই-বাছাই করার কাজও চলমান রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় আট লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
কর্মকর্তাদের বদলি: মাঠ প্রশাসনে গতি আনতে কর্মকর্তাদের বড় ধরনের রদবদল শুরু করেছে ইসি। এরই মধ্যে ১৭৪ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আঞ্চলিক এবং উপজেলা-থানা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা একই উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাদের প্রথমে বদলি করা হচ্ছে, যাতে স্বজনপ্রীতি না করে আগামী নির্বাচনে সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শুধু মাঠ পর্যায়ের পদগুলো নয়, আঞ্চলিক, জেলা, অতিরিক্ত জেলা এবং ইসি সচিবালয়ের সব পর্যায়ের উচ্চ পদগুলোতেও পরিবর্তন আনা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে বদলির পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ