শিরোনাম
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩:৩২, ৭ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩১, ৭ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
মেয়ের জন্মদিনের কথা তুলে বিলাপ করছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হায়রে মা, খইয়া গেলে জন্মদিনে লগের তারা (সহপাঠীরা) খাওয়াইত, আনন্দ করত। এরপর তাড়াতাড়ি বাড়িত আইবে। এমন আনন্দ করলে আর বাড়িত আইলে নারে মা, কিলা সহ্য খরতাম...।
আফসানা জাহান ওরফে খুশি বুধবার (৬ আগস্ট) সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান। তার সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন স্নেহা চক্রবর্তী (১৮) ও শফিকুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। এই দুজনও একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্নেহা চক্রবর্তী বুধবার সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সুবিপ্রবি) ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবা বিপুল চক্রবর্তী মেয়েকে নিজে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। এরপর তাকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি করে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে পথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থেমে যায় স্নেহার। তার গ্রামের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হলেও সুনামগঞ্জ শহরে থাকতেন।
আফসানা জাহানের বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরপিননগর এলাকায়। বাবা দেলোয়ার হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। মা নুরুন্নাহান গৃহিণী। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে আফসানা ছোট। বড় মেয়ে নুশরাত জাহানের বিয়ে হয়েছে।
আফসানা জাহানের মামা সাইফুল আলম (ছদরুল) বলেন, আফসানা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে লেখাপড়া করে গত বছর সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। এবার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিল। প্রতিদিন শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা লেগুনায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করত।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ টেক্সস্টাইল ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস অবস্থিত। ওই প্রতিষ্ঠানেই সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে গত বছর থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের ওই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন।
বুধবার দুপুরে শান্তিগঞ্জ থেকে ফেরার পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অটোরিকশার। সেখানেই তিনজন মারা যান। আহত হন আরো একজন ছাত্রী ও অটোরিকশার চালক।
সাইফুল ইসলাম জানান, আফসানা জাহানের লাশের পাশে তার ব্যাগটি পড়ে ছিল। এটি বাড়িতে এনে খুলে দেখা যায়, ভেতরে জন্মদিনের অনেক উপহার। তার ছবি যুক্ত করে সহপাঠীরা দিয়েছেন কোনোটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শেখ আবদুল লতিফ বলেন, সকালে একটি মেয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আরেকটি মেয়ে একই ক্যাম্পাসে পড়ত। তারা তো আমাদেরই মেয়ে। আমরা তো তাদের আর পাব না। তবে এর কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, আমরা সেটি দেখব।
শেখ আবদুল লতিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সড়কে অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলে। অনেক চালক অদক্ষ। এসব কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ